নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উত্তর কলকাতা ও শহরতলিজুড়ে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পদধূলিধন্য একাধিক ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। তার মধ্যে অন্যতম হল, বাগবাজারে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাসভবন। এই বাড়িতে কয়েকবার রামকৃষ্ণদেবের পদার্পণ হয়েছিল। রামকৃষ্ণ গবেষক নির্মলকুমার রায় তাঁর ‘চরণ চিহ্ন ধরে’ গ্রন্থে ‘রামকৃষ্ণ কথামৃত’কে উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন, ‘১৮৮৫ সালে ১১ মার্চ গিরিশ ঘোষের বাড়িতে ভক্ত সঙ্গে গিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব। ঠাকুরের পদধূলি গ্রহণ করে তাঁকে ওই বাটির দোতলার বৈঠকখানার ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিলেন।’ কথিত আছে, সেখানেই ঠাকুরের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বাড়িতেই রয়েছে গিরিশচন্দ্র ঘোষের ব্যবহার করা নানা জিনিসপত্র। বাড়িটি দেখতে আজও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। শুক্রবার ছিল নাট্যাচার্যের ১৮২তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে বাড়ির চারপাশ সাজানো হয়। সন্ধ্যায় ছিল গিরিশ ঘোষ স্মারক বক্তৃতা। বিষয়, ‘স্টার থেকে বিনোদিনী: গিরিশচন্দ্র’। মঞ্চস্থ হয় ‘কারাগার’ নাটক। গবেষক ডঃ দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘লীলাপ্রসঙ্গ’, ‘কথামৃত’, ‘শ্রীম‑দর্শন’, ‘ভক্ত‑মালিকা’, ‘শ্রীরামকৃষ্ণের অনুধ্যান’, ‘লাটু মহারাজের স্মৃতিকথা’ প্রভৃতি বইয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে গিরিশ ঘোষের নানা প্রসঙ্গ। তবে অনেকেই আক্ষেপ করে এদিন বলেছেন, বাড়িটি করুণ অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত সংস্কারের দরকার। না হলে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে এই শহরের মূল্যবান একটি দ্রষ্টব্য। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, কলকাতা পুরসভা বহু আগেই গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে। এটি রক্ষা করা বেশি জরুরি।
গিরিশ ঘোষের বাড়ি ছাড়াও উত্তর কলকাতার কাশীপুর, সিঁথি, কুমোরটুলি, শ্যামপুকুর, বাগবাজার সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে রামকৃষ্ণদেবের নানা স্মৃতিচিহ্ন। আজ, শনিবার রামকৃষ্ণদেবের ১৯০ তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে এই সমস্ত ধর্মীয় পীঠস্থানে দিনভর থাকছে নানা অনুষ্ঠান। শুক্রবার গিরিশ ঘোষের বাড়িটি দর্শন ও রামকৃষ্ণ পীঠস্থানগুলি দর্শন করেছেন বহু মানুষ।