বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার পদে গত মাসে ইস্তফা দিয়েছিলেন মানস চক্রবর্তী। অস্থায়ী ভাবে তাঁর কাজ সামলাচ্ছিলেন অবসরের পরে চুক্তিভিত্তিক আধিকারিক হিসেবে পুনর্নিয়োগ পাওয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার দেবাশিস রায়।
এ বার তাঁর বদলে কাউন্সিলের হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট (করণকি) অরিন্দম দাসকে অস্থায়ী রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হলো। অথচ আর এক অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার স্বরূপ দত্তের চাকরি রয়েছে এখনও ছ’বছর। বিতর্ক তৈরি হয়েছে, একাধিক পদ এবং ব্যক্তিকে টপকে হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরতকে কেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হলো? এ নিয়ে সরব হয়েছেন চিকিৎসকমহলের একাংশ।
মেডিক্যাল কাউন্সিল সূত্রে খবর, ২০২০–র ৩০ জুন বয়স ৬০ হওয়ায় দেবাশিসের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, ২০১৯–এ অবসরের পরেও অবৈধ ভাবে পদ আঁকড়ে থাকা তৎকালীন রেজিস্ট্রার মানসের বদান্যতাতেই অবসরের পরে চুক্তির ভিত্তিতে পুনর্নিয়োগ হয় দেবাশিসের। আর এক অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ৫৪ বছরের স্বরূপ দত্তকে বাদ দিয়ে কেন দেবাশিসের মতো এক অবসরপ্রাপ্তকে চুক্তিভিত্তিক অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রারকে অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তার পরে এখন কেন দায়িত্বে আনা হলো প্রধান করণিক পদে কর্মরত অরিন্দমকে, তা নিয়ে বিস্মিত চিকিৎসকেরা।
বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যাক্ট (১৯১৪)–এর ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়ম হলো, রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ করা হয় অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার থেকে পদোন্নতির ভিত্তিতে। একই ভাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ হয় আপার-ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট (ইউডিএ) থেকে পদোন্নতির ভিত্তিতে। সেই নিয়মেই অতীতে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ৃথেকে রেজিস্ট্রার পদে উন্নীত হয়েছিলেন যথাক্রমে দিলীপকুমার ঘোষ ও মানস চক্রবর্তী। এবং তাঁরা দু’জনই ইউডিএ পদ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার হয়েছিলেন তার আগে। আবার ইউডিএ থেকেই অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পদে একই প্রক্রিয়ায় উন্নীত হয়েছিলেন দেবাশিস ও স্বরূপ।
তাই অরিন্দম কী ভাবে সবাইকে টপকে হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ থেকে রেজিস্ট্রারের অস্থায়ী দায়িত্ব পেলেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না কারও। ২০০৯–এ দৈনিক কাজের ভিত্তিতে কাউন্সিলে তাঁর নিয়োগ হয়েছিল ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে। নির্মল মাজি কাউন্সিলের সভাপতি থাকাকালীন ২০১৩-য় লোয়ার–ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট (এলডিএ) পদে উন্নীত হন। ২০১৭-তে হন ইউডিএ এবং ২০২৩-এ হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট। সেই অরিন্দমই এখন অস্থায়ী রেজিস্ট্রার! অনেকেরই অভিযোগ, অরিন্দমের বসবাস যেহেতু সিঁথির মোড় এলাকায়, কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি সুদীপ্ত রায়ের বাড়ির অদূরে, সেই ভিত্তিতেই কি তাঁকে বাছা হলো?
সুদীপ্ত অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘এর আগে যে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল, তাতে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে রেজিস্ট্রার পদের উপযোগী তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। ফের বিজ্ঞাপন দেবে কাউন্সিল। এর মধ্যে অস্থায়ী ভাবে অফিস পরিচালনার জন্যে অরিন্দম দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়মবিরুদ্ধ কিছু হয়নি।’ যদিও স্বরূপ দত্ত নামে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার থাকার পরেও তাঁকে বাদ দিয়ে তাঁর চেয়ে নীচের পদের কাউকে কেন রেজিস্ট্রারের অফিস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি কাউন্সিল সভাপতি।