• ‘কখনও যায় সামনে তেড়ে, কখনও যায় পাছে’
    এই সময় | ০১ মার্চ ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    কোনও হালকা ব্যাপার নয়। তবে সহজ করে বললে মাটির নীচে দুই ‘খ্যাপার লড়াই’। এক জন ইউরেশিয়া প্লেট। অন্যজন ইন্ডিয়ান প্লেট। দু’জনেই ভেসে রয়েছে মাটির নীচে তরল লাভার উপরে। ভাসমান ভূ–স্তর দুটো প্লেটের লড়াই। সুকুমার রায়ের পাগলা জগাইয়ের মতো, ‘তড়াক করে লাফ দিয়ে যায় ডাইনে থেকে বামে’। শুক্রবার ভোরে ২টা ৩৭ মিনিটে এমনটাই হয়েছে নেপালের কেদারি এলাকায় দশ কিলোমিটার মাটির গভীরে। এর জেরে কেঁপে উঠেছে উত্তরবঙ্গ, লাগোয়া সিকিম, বিহার এবং প্রতিবেশী দেশ নেপালে।

    বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভোর রাতে ইউরেশিয়া প্লেটের সঙ্গে ইন্ডিয়ান প্লেটের একটা জবরদস্ত লড়াই হয়। ইউরেশিয়া প্লেট বরাবরই চেষ্টা করে ইন্ডিয়ান প্লেটের উপরে উঠে যেতে। ফুঁসে ওঠে ইন্ডিয়ান প্লেটও। শুক্রবার ভোরেও ইউরেশিয়া প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেটের ঘাড়ে চেপে বসার চেষ্টা করেছিল। ইন্ডিয়ান প্লেট রুখে দেয়। আর তার জেরেই কেঁপে ওঠে উত্তরের মেদিনী। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.১। প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোনও হিসাব পাওয়া না-গেলেও নেপালে বেশ কিছু মাটি ও পাথরের তৈরি বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।

    তবে ক্ষতক্ষতির চেয়ে বড় হয় আতঙ্ক। ভূমিকম্প বরাবরই উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের ব্যাপার। ছোটখাটো কম্পন দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমে লেগেই রয়েছে। কিন্তু ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিকিম-নেপাল সীমান্তের ভূমিকম্পের জেরে প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় নেপালের ভূমিকম্পেও কেঁপে ওঠে শিলিগুড়ি ও সিকিম। সন্ধ্যায় ভূমিকম্প হয় বলে বহু লোক ঘর থেকে বাইরে বার হয়ে আসতে পেরেছিলেন। শুক্রবার ভোরে ঘুম চোখে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি কী করা উচিত। কিছু লোক রাস্তায় বার হন। কিন্তু আফটার শক্ অর্থাৎ প্রথম কম্পনের পরে নতুন করে আর কোনও কম্পন অনুভূত না-হওয়ায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। যদিও ভয়টা থেকেই যায়।

    শুক্রবার সকাল হলে সমাজ মাধ্যম জুড়ে একটাই আলোচনা, কে কে ভূমিকম্প টের পেয়েছে অথবা পায়নি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখার অধিকর্তা গোপীনাথ রাহাও একমত যে, ‘মাঝরাত কেন, যে কোনও সময়েই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। ভূমিকম্প নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আগাম অনুমান করা সম্ভব নয়। আর আমাদের এই এলাকা বরাবরই ভূমিকম্প প্রবণ।’

    বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশের ভূমিকম্প অঞ্চল মানচিত্র অনুসারে সক্রিয়তার বিচারে ‘জোন ফোর’ অন্তর্ভূক্ত উত্তরবঙ্গের কালিম্পং এবং সিকিম। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসেই গড়ে দু-তিন বার করে এই এলাকা কেঁপে ওঠে। সিকিমের তাদংয়ে ভূমিকম্প মাপার সরঞ্জাম বসানো রয়েছে। সেখান থেকে নিয়মিত ভাবে কম্পনের উৎস ধরা পড়ে। কম্পনের মাত্রা সামান্য বলে অনেকে গা লাগান না। কিন্তু রিখটার স্কেলে কম্পন ৫ ছাড়ালেই আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে। শুক্রবারও সেটাই হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)