দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
ছাত্রদের বসার বেঞ্চ–সহ অন্যান্য পরিকাঠামোগত কাজ করার জন্য বহু মূল্যের গাছ কেটে বিপাকে জলপাইগুড়ির দেবনগর সতীশ লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সামনে আসতেই ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তদন্তের দাবিতে পরিবেশ প্রেমী সংগঠন, স্থানীয় বাসিন্দা এমনকী পরিচালন কমিটির সভাপতি সুবীর সরকার কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সুবীর বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির বৈঠকে চারটি গাছ কাটার রেজ়োলিউশন নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য বন দপ্তরের পক্ষ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু কমিটিকে না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বেআইনি ভাবে ভিন্ন প্রজাতির অতিরিক্ত বহুমূল্যের গাছ কেটে দিয়েছেন।’
এই ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্যালয়ে পরিবেশ রক্ষার পাঠ পড়ানো হয়, সেখানেই যদি এ ভাবে পরিবেশ ধ্বংস করা হয় তা হলে পড়ুয়ারা কী শিখবে?
জলপাইগুড়ি দেবনগর সতীশ লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে আকাশমণি, জারুল সহ একাধিক গাছ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই গাছগুলি রয়েছে। বর্তমানে সেগুলির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরেরও বেশি।’
সম্প্রতি বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়, পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য কয়েকটি গাছ কেটে তা বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মেটানো এবং ক্লাসে বেঞ্চ তৈরি সহ অন্যান্য কাজ করা হবে। পুরো বিষয়টি জানিয়ে বন দপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়। সূত্রের খবর, বন দপ্তরের কাছ থেকে শুধুমাত্র ৪টি গাছ কাটার অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, ৪টি আকাশমণি গাছ ছাড়াও আরও ১৪টি গাছ বেআইনি ভাবে কাটা হয়েছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই একজোট হয়েছেন দেবনগরের স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং পরিবেশ প্রেমী সংগঠন।
এদিন স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন,‘আমরা কয়েকদিন থেকে দেখছি গাছ কাটা হচ্ছে। গতকাল বন্ধ থাকলেও শুক্রবার কাজ শুরু হলে বাধা দেওয়া হয়। এর পর শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বলেন, বন দপ্তরের থেকে অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে। এর পরে বিষয়টি বন দপ্তর এবং কোতয়ালি থানাকে জানানো হয়।’ পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি করে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানান সুব্রত। এদিকে, পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অর্কপ্রভ মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভিতরে এ ভাবে পরিবেশ ধ্বংস করা হবে তা আশা করা যায় না। তাছাড়া বন দপ্তর চারটি গাছ কাটার অনুমতি দিলেও ওই গাছ বিক্রি করার অনুমতি দেয়নি। এর বিরুদ্ধেই এদিন থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারিজাত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। তবে বন দপ্তরের আধিকারিক পার্থ মজুমদার জানান, বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।