এই সময়: গত ৯ অগস্ট আরজি করে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের গাফিলতি রয়েছে বলে খোদ সিবিআই প্রধানের কাছেই অভিযোগ জানিয়ে এলেন ওই ঘটনায় ধর্ষিত–নিহত তরুণী চিকিৎসকের মা–বাবা। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আঁতাঁত থাকার কারণেই যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল।
সেই দলের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অভয়ার মা–বাবা। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সিবিআই অধিকর্তা প্রবীণ সুদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে তাঁর হাতে এই দাবি সম্বলিত একটি চিঠি তুলে দেন তাঁরা।
গোড়া থেকেই অভয়ার মা–বাবা দাবি করে এসেছেন, এত বড় ঘটনার নেপথ্যে একা সঞ্জয় রায় ছিল না। তাকে সাহায্য করা এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটে নিশ্চিত ভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির যোগসাজশ ছিল। কিন্তু সেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এবং এ নিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে অনেক খামতি ছিল সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের।
অভয়ার মা–বাবা চিঠিতে লিখেছেন, কলকাতা পুলিশ যে তথ্যপ্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল, সিবিআই সেগুলির উপরেই অন্ধ ভাবে নির্ভর করেছে এবং নিজে থেকে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের তাগিদ দেখায়নি। কেন এমন আচরণ করলেন সিবিআইয়ের নিচুতলার আধিকারিকরা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি দাবি করে সিবিআই প্রধানের কাছে এ নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
মা–বাবার আরও অভিযোগ, তদন্তের যে সব বিষয়ে আরও গভীরে যাওয়া উচিত ছিল, সে সব বিষয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সেগুলি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাননি সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সীমা পাহুজা ও তাঁর টিম। এর মধ্যে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভয়ার মা–বাবা চিঠিতে লিখেছেন, অক্টোবরের গোড়ার দিকে সিবিআই প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করার পরে অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়ার কথা বললেও চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করেনি আদালতে।
তাঁদের দাবি, তদন্তের গতিপ্রকৃতি খুঁটিয়ে দেখলেই স্পষ্ট মনে হয় যে, অনেক সূত্র যেন দেখেও দেখেননি তদন্তকারীরা। ফলে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আদালতে প্রতিষ্ঠাও করতে পারেনি সিবিআই। সে জন্যেই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পেয়ে গিয়েছেন খুন–ধর্ষণের মামলায়।
এই সব কারণের কথা তুলে ধরে সীমা পাহুজা ও তাঁর টিমের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন অভয়ার মা–বাবা। সিবিআই প্রধানের কাছে ওই টিমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রবীণ সুদের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা দাবি করেছেন, এই সব ভুলত্রুটি যদি সিবিআই অবিলম্বে শুধরে না নেয় তা হলে তদন্তের নামে প্রহসনই হবে আগামী দিনেও।