এই সময়: কলকাতার মাটির তলায় মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে পুরসভার জলের পাইপলাইন। মাটির নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে অজস্র নিকাশি–নালা। কোথাও রয়েছে বিদ্যুতের লাইন। কিন্তু ঠিক কোথা দিয়ে জল ও বিদ্যুতের লাইন গিয়েছে কিংবা কোন জায়গায় নিকাশি–নালা রয়েছে, তার কোনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই পুরসভার কাছে। ফলে প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে এজেন্সিগুলিকে। উন্নয়নের কাজে বারবার ঘটছে বিপত্তি। বিদ্যুতের লাইন বসাতে গিয়ে কখনও পুরসভার জলের লাইন ফেটে যাচ্ছে। কখনও আবার তার উল্টো ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রতি বছর বিপুল টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। যার মাশুল গুণতে হচ্ছে শহরবাসীকে।
গত কয়েক মাসে টালিগঞ্জ এবং বেহালার কয়েকটি ওয়ার্ডে কেবল লাইন বসাচ্ছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তার ফলে রাস্তার দফারফা হয়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে নিকাশি–নালা। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিদ্যুৎ দপ্তরের হাতে সাত কোটি টাকার বিল ধরিয়েছে পুরসভা। উল্টো দিকে ওই বিদ্যুৎ কোম্পানির দাবি, পুরসভার নিকাশি–নালার কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারেরা অনেক জায়গায় তাদের কেবল লাইনের তার নষ্ট করে দিয়েছে। তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিদ্যুৎ দপ্তর কলকাতা পুরসভার কাছে ১৮ কোটি টাকা দাবি করেছে।
পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের ভূগর্ভের কোনও ম্যাপ না–থাকায় অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতে হয় এজেন্সিগুলিকে। জল বা বিদ্যুতের লাইন বসাতে তারা না জেনেই মাটির তলা দিয়ে মেশিনের সাহায্যে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। সেই মেশিনের সামনে যা পড়ছে, সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, কখনও রাস্তার, কখনও ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে জলের পাইপ লাইন ফাটিয়ে ফেলছেন ঠিকাদারের লোকেরা। প্রতি বছর জলের পাইপ লাইন সারাতে তাই চার–পাঁচ কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, তার জন্য ড্যামারেজ চার্জ দেওয়ার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই টাকা আদায় হয় না।
কলকাতা পুরসভার টাউন প্ল্যানিং বিভাগের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার দীপঙ্কর সিংহের কথায়, ‘প্রত্যেকটা উন্নত দেশে ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য ভূগর্ভের তলায় আলাদা চ্যানেল থাকে। এটা নগর পরিকল্পনার একটা অঙ্গ। এটা সাধারণত পুরসভারই নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভবিষ্যতে কোথায় কত বাড়ি হতে পারে, তার জন্য কোথা দিয়ে জলের লাইন, ইলেকট্রিক তার যাবে — তার পরিকল্পনা করতে হয়। সেটা না–হওয়াতেই কলকাতায় এত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রাস্তা খোঁড়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। মাটির তলায় কোথায় কী রয়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারেরা ভাল জানেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নিলে এই সমস্যা তৈরি হয় না। অনেকে সেটা করে না। তার জন্যই বিপত্তি ঘটে।’