• ২০২৬ নির্বাচনের আগে মমতার ভোকাল টনিক
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০১ মার্চ ২০২৫
  • প্রবীর ঘোষাল

    এই হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে তাঁকে কাছ থেকে দেখছি। আজ পর্যন্ত কোনও নির্বাচনকে মমতা হালকাভাবে নেননি। ভোটের বহু আগে থেকেই নিজে তো মাঠে নামতেনই, দলকেও নামিয়ে দিতেন। কংগ্রেস যখন অবিভক্ত ছিল, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি, তখনও একই ভূমিকায় দেখেছি তাঁকে। এভাবেই তিনি অপরাজেয় হয়ে উঠেছেন।

    মমতা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন ২০১১ সালে। সেবার তো দু’বছর আগে থেকে বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে লোকসভার নির্বাচনেই বস্তুত এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। ৪২টি আসনের মধ্যে মমতার নেতৃত্বে সিপিএম-বিরোধী জোট ২৬টি আসন দখল করেছিল।

    পরিবর্তনের সেই হাওয়াকে মমতা কার্যত ঝড়ে পরিণত করেন ২০১১ সালের বিধানসভার ভোটে। ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১৮৪টি আসন একাই জিতে নেয় জোড়াফুল। আর ৩৪ বছর ক্ষমতার দম্ভে বুঁদ বামফ্রন্ট পায় মাত্র ৬০ আসন। অথচ, পাঁচ বছর আগে ২০০৬ সালের ভোটে বামফ্রন্টের ছিল ২৩৫টি আসন। সিপিএমের নেতানেত্রীরা তখন বলেছিলেন, ‘আরও ৫০ বছর তাঁরা ক্ষমতায় থাকবেন। রাজ্য রাজনীতি থেকে মমতা এবং তৃণমূল কংগ্রেস মুছে যাবে।’

    কিন্তু সিপিএমের সেই চ্যালেঞ্জকে মিথ্যে প্রমাণ করতে মমতার ৫ বছর লেগেছিল। তারপর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের গ্রাফ বেড়েই চলেছে। কি লোকসভা আর কি বিধানসভা— সব নির্বাচনেই তাদের প্রতিপক্ষ উড়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন পাওয়ার পর মমতা-বিরোধীরা আনন্দে নৃত্য শুরু করে দেয়। পদ্ম শিবির ক্ষমতা দখলের খোয়াবে ডুবে যায়। ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে দেখা গেল, ২১৩ আসনে জয়লাভ করে মমতার ক্ষমতা আরও বেড়ে গিয়েছে। ৫ বছর আগের চেয়ে জোড়া ফুলের আরও ২টি আসন বেশি। প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করে, কিন্তু বাংলায় মমতা-ম্যাজিকে প্রতিপক্ষ ঘায়েল হয়ে যায় বার বার।

    কিন্তু প্রবল কিংবা দুর্বল কোনও প্রতিপক্ষকেই নির্বাচনের ময়দানে লঘু করে না দেখেই মমতার ম্যাজিকের আসল রহস্য। ২০১৮ সালের লোকসভা নির্বাচন মিটতেই তিনি কৌশল নির্ধারণ করে, দল এবং প্রশাসনের নিবিড় জনসংযোগের একাধিক কর্মসূচি নেন। ডায়মন্ড হারবারের এমপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়েন। তাতেই নির্বাচনে সাফল্যের নতুন ইতিহাস রচনা করে জোড়াফুল। বিগত লোকসভার নির্বাচন পর্যন্ত মমতার পরিকল্পনারই জয় হয়।

    সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখতেই বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সর্বস্তরের নেতা-নেত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের ‘ভোকাল টনিক’ দেন মমতা। ভোটের এখনও এক বচরের মতো দেরি আছে। অভিষেক হিসেব করে দেখিয়ে দেন, বস্তুত প্রচারের কাজে হাতে সময় পাওয়া যাবে ৪-৫ মাস। এই সময়ে দলকে কী কী কাজে গুরুত্ব দিতে হবে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেন মমতা। কোনও সন্দেহ নেই বিরোধীরা যখন ঘরছাড়া এবং দিশেহারা তখন নেত্রীর ‘ভোকাল টনিক’ তৃণমূল কংগ্রেসকে নিঃসন্দেহে উদ্বুদ্ধ করবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পয়লা রাউন্ডে এভাবেই দলকে চাঙ্গা করে দিলেন মমতা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)