এই সময়: রাগের মাথায় নয়, পরিকল্পনা করেই পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষকে খুন করেছিলেন আরতি ঘোষ ও তাঁর মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষ! কলকাতার কুমোরটুলি ঘাটের নীল ট্রলিব্যাগ রহস্যের মামলায় ধৃতদের জেরা করে এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ।
খুনের পরিকল্পনায় ‘তৃতীয়’ ব্যক্তির যোগ রয়েছে বলেও মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সেই ‘রহস্যময়’ ব্যক্তিই ট্রলিব্যাগ কেনা থেকে শুরু করে খুনের পর কী ভাবে, কোথায় দেহ লোপাট করা যায়, প্রতিটা পদক্ষেপে সাহায্য করেছিলেন বলে পুলিশের সন্দেহ।
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার কুমোরটুলি ঘাটের কাছে ধরা পড়ার পর অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষ প্রথম থেকেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। ফাল্গুনী দাবি করেন, সুমিতাকে সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ খুন করা হয়েছিল। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে যায়, ঘটনাটি আসলে ঘটেছিল রবিবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে।
সুমিতাকে ইট দিয়ে মুখ থেঁতলানোর পর, মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর শ্বাসরোধ করা হয়েছিল। এর পর ট্রলিব্যাগে ভরার জন্য দু’পায়ের গোড়ালি কাটা হয়েছিল। ওই নীল ট্রলিব্যাগটি সুমিতা নিজেই এনেছিলেন, নাকি আলাদা করে পরিকল্পনামাফিক ট্রলিব্যাগ কিনেছিলেন মা–মেয়ে— সেই ব্যাপারেও তদন্তকারীরা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
পুলিশের অনুমান, সুমিতাকে বাড়িতে ডেকে কবে, কী ভাবে খুন করা হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। ফাল্গুনীকে সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর ওই পরিচিত ব্যক্তি। সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পুলিশের হাতে চলেও এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তির বিষয়ে ধৃতদের জেরা করা হলে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। সে বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে ফাল্গুনী এবং তাঁর মা আরতির ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লির যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আরতি–ফাল্গুনীরা, সেখানে তদন্তে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্থানীয়দের সঙ্গে ফাল্গুনীদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। অপরিচিতদের যাতায়াত ছিল ওই বাড়িতে। তাঁদের মধ্যে এক যুবক ঘন ঘন যাতায়াত করতেন সেখানে। ফাল্গুনীর সঙ্গেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল।
তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, মঙ্গলবার ভোররাত সম্ভবত ওই যুবকই সাহায্য করতে এসেছিলেন তাঁকে। পুলিশ সূত্রে খবর, ভ্যানরিকশা চালক হারাধন হালদারের বয়ানের সঙ্গে প্রতিবেশীদের বয়ানেও মিলে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ওই যুবকের বয়স ৪৫ বছরের আশপাশে। সাদা জামা এবং ট্রাউজ়ার্স পরেছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, যে ট্রলি ব্যাগে দেহ ছিল, তার চাবি মা ও মেয়ের কাছে ছিল না। এক পুলিশ কর্তা জানান, বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে এবং হবে। এক ব্যক্তির খোঁজ চলছে।