তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা-র বৈঠক ঘিরে ধুন্ধুমার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক ছাত্রের গায়ে শিক্ষামন্ত্রীর কনভয়ে থাকা একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় বলেও অভিযোগ। মাথায় আঘাত লাগে তাঁর। রক্তাক্ত ওই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ওই ছাত্রের নাম ইন্দ্রানুজ রায়। ইংরেজির প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। আপাতত কেপিসিতে তাঁকে ভর্তি করা হলেও এসএসকেএমের সিসিইউ-এ স্থানান্তরিত করা হতে পারে। ইন্দ্রানুজের সহপাঠীদের দাবি, তাঁর মাথার এক পাশ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই আপাতত ইমার্জেন্সি অবজ়ারভেশনে রাখা হয়েছে ওই ছাত্রকে।
বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপা-র রাজ্য সম্মেলন ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকেই বাম, অতি বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের স্লোগান-পোস্টারে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। শিক্ষামন্ত্রী ক্যাম্পাসে পৌঁছতেই সেই উত্তাপ আরও বাড়ে।
ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ, ভাঙচুরে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর কনভয়ে থাকা একটি গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। গাড়ির উপর উঠে পড়েন ছাত্ররা। গাড়িতে ইট ছোড়া হয়।
এই পরিস্থিতে ব্রাত্য বসুর গাড়ি ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই উল্টো দিক থেকে বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রীর গাড়ির গায়ে চাপড়াতে থাকে। কিছু পড়ুয়া গাড়ির নীচে শুয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ইন্দ্রানুজ সে সময়ে গাড়ির উপর উঠে পড়েন। এ দিকে এত ধাক্কাধাক্কিতে কোনও ভাবে গাড়ি থেকে তিনি পড়ে যান, রক্তাক্ত হন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময়ে ব্রাত্য বলেন, ‘এটাই ছাত্র সংগঠনগুলোর চেহারা। এরাই রাস্তায় নেমে অসভ্যতা করে। এই অসভ্যতা বরদাস্ত করা হচ্ছে। আমরা ধৈর্য, স্থৈর্য, সহিষ্ণুতার পাঠ জানি। আমি প্রত্যেককে বললাম, ২-৪ জন করে আসুন, কথা বলব। ওরা বলছেন, ৪০ জন মিলে কথা বলবেন। ৪০ জনে কথা হয়? এর পরই এখানে আমাকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে প্ররোচনা দিচ্ছে যাতে পুলিশ ডাকি। আমরা পুলিশ ডাকব না।’
এর পরই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় শিক্ষামন্ত্রীর কনভয়। সোজা পৌঁছয় এসএসকেএম হাসপাতালে। বিকাল ৫টা নাগাদ এসএসকেএমে যান শিক্ষামন্ত্রী। গাড়ির ভাঙা কাচ ছিটকে লাগে ব্রাত্যর বুকে। তবে ক্ষত হয়নি। যদিও ধাক্কাধাক্কিতে মন্ত্রীর বাঁ হাতের কব্জিতে চোট লাগে। যন্ত্রণা হচ্ছিল। হাতের এক্স-রে করানো হয়। দেওয়া হয় পেনকিলার। দেখা যায়, হাড় বা লিগামেন্টে নয়, মাংসপেশিতে আঘাত লেগেছে।
সেখান থেকে বেরিয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আমার বাঁ হাতে লেগেছিল। তাই এক্স-রে করানো হলো। আমি একেবারে সামনের সিটে ছিলাম। এ দিকে ইট, ঘুসি দিয়ে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। কাচের টুকরো পুরোটাই আমার গায়ে, মুখে লাগে। এখন ঠিকই আছি। অসুবিধা নেই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে ছাত্রই আহত হয়ে থাকুক, তার জন্য আমার সমবেদনা রয়েছে। সে আমাদের পক্ষে থাক বা বিপক্ষে থাক। তবে আজ এই নৈরাজ্য সৃষ্টি না করলেই ভালো হতো।’
ক্যাম্পাসের অশান্তির আঁচ পৌঁছয় যাদবপুর এইটবি মোড়েও। জমায়েত, বিক্ষোভে আপাতত সে পথ স্তব্ধ। এক দিকে বাম, অতি বাম ছাত্র সংগঠনগুলির বিক্ষোভ, অন্য দিকে তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রীদের মিছিল। যাদবপুর থানার সামনেও হাজার হাজার মানুষের জমায়েত, পুলিশে ছয়লাপ।