মদ দেখলেই বুক কাঁপছে ঘাটালের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের চাঁদুর গ্রামের পুরুষদের। সুরাপাত্রে চুমুক দেওয়া মানেই প্রবল ঠ্যাঙানি নিশ্চিত। ভয়ে মদ ছেড়েছেন গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ পুরুষ। আর যাঁরা এখনও মদের নেশা ছাড়তে পারেননি, তাঁরা মদ্যপ অবস্থায় পারতপক্ষে পা রাখেন না গ্রামে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের চাঁদুর গ্রামে ৭০০-৮০০ পরিবারের বসবাস। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামে রমরমিয়ে চলছিল মদের বেআইনি কারবার। চায়ের দোকান, পানের দোকান, মুদির দোকান, সব জায়গাতেই কমবেশি পাওয়া যেত দেশি-বিদেশি ও চোলাই মদ। মদে আসক্ত হয়ে সংসারে নিত্যদিন অশান্তি করতেন গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ। রাতে ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারতেন না মহিলারা। মদ্যপদের দৌরাত্মে সন্ধ্যার পর টিউশন যেতেও ভয় পেত গ্রামের পড়ুয়ারা।
গ্রামের মহিলাদের অভিযোগ, বারবার পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও মিলছিল না সুরাহা। কারণ পুলিশ গ্রামে পা রাখলেই সেই চোলাই মদ সরিয়ে ফেলতেন দোকানদাররা। অবশেষে ব্যাটন নিজেদের হাতে তুলে নেন গ্রামের মহিলারা। বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি করতে দেখলেই চলছে দেদার ঠ্যাঙানি। আর প্রমীলা বাহিনীর দাপটে এখন জুজু মদ্যপ থেকে বেআইনি মদের কারবারে যুক্ত লোকজন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামের একটি পুকুর থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, মদ্যপ অবস্থায় পুকুরে পড়ে মৃত্যু হয়েছে যুবকটির। এই ঘটনার পরেই বেআইনি মদ বিক্রি ঠেকানোর জন্য একত্রিত হন গ্রামের মহিলারা। এলাকায় যেখানে যেখানে মদ বিক্রি হয়, লাঠি হাতে সেখানে সেখানেই ভাঙচুর চালানো শুরু করেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, মাতালদের সোজা করার জন্য লাঠি হাতে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টহল দেওয়াও শুরু করেছেন মহিলারা।
সোনালি নায়েক, অপর্ণা দলুইরা জোর গলায় হুঙ্কার দিচ্ছেন, ‘এই গ্রামে মদ বিক্রি করলে বা মদ খেয়ে মাতলামি করলেই পিঠে পড়বে লাঠির ঘা।’ আর মহিলাদের এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত (মনোহরপুর ৬/২ গ্রাম পঞ্চায়েত) প্রধান মাধুরী সিং দোলই, ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসও। তিনি জানান, প্রশাসন ওই মহিলাদের পাশে রয়েছে।