• জাল ভোটার-আধার কার্ড, আঙুলের ছাপে কারসাজি করেই সীমান্তে ভুয়ো সিম চক্র! পুলিশের নজরে ৫০
    আনন্দবাজার | ০১ মার্চ ২০২৫
  • ভুয়ো সিম কার্ড চক্রের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদে, বিশেষত সীমান্ত এলাকায়, অভিযান শুরু করল সাইবার অপরাধ শাখা। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠিত সাইবার অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদের একাধিক সীমান্তবর্তী থানা এলাকায় তদন্তে নেমেছে পুলিশ। নতুন করে মুর্শিদাবাদের ৫০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণও হাতে রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

    মুর্শিদাবাদে ভুয়ো সিম কার্ডের রমরমা নতুন নয়। এর আগেও নানা অভিযানে বেশ কিছু ভুয়ো সিম বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। গ্রেফতারও হয়েছিলেন কয়েক জন। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভুয়ো সিম কার্ডগুলি ‘প্রি-অ্যাকটিভেটেড’। অর্থাৎ আগে থেকেই চালু। এই সিম পেতে কোনও পরিচয়পত্র লাগে না। আর এখানেই এই সিমের বিপদ। দুষ্কৃতীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে অন্যের নামে নেওয়া এই সিম কার্ড অবলীলায় ব্যবহার করে। তার পর মোবাইলে সেই সিম ব্যবহার করে তোলাবাজি, অপহরণ থেকে নাশকতা— নানা ধরনের অপরাধের ছক কষা হয়। এ ক্ষেত্রে সিমের মালিকের খোঁজ চালিয়ে অপরাধীকে ধরাও সম্ভব নয়। পুলিশের পরিভাষায় এটি হল ‘ব্ল্যাক সিম’। পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে পরিচয়পত্র নেওয়ার পরে তা হুবহু নকল করে নেয় দুষ্টচক্রের লোকেরা। তার পর সেই নকল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্থার একাধিক সিম তুলে নেয়। ফলে, মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো অন্ধকারে থাকে।

    তদন্তকারী সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, মুর্শিদাবাদের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেলডাঙা, ফরাক্কা, সুতি, জলঙ্গি, নওদা, ভগবানগোলা ও হরিহরপাড়া থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে এই ভুয়ো সিম চালু করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। গ্রাহক ভোটার-আধার কার্ড জাল করে বা আঙুলের ছাপে কারসাজি করে এই ভুয়ো সিমের চক্র চলে। পরে সেই সিম হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় সাইবার অপরাধী চক্রের কাছে।

    পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মোবাইলের নতুন সিম সংযোগ নিতে গেলে ‘বায়োমেট্রিক’ তথ্য দিতে হয়, অর্থাৎ আঙুলের ছাপ। এক বার আঙুলের ছাপ দিলে বিক্রেতা অনুরোধ করেন ছাপ ঠিকঠাক হয়নি। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বার ছাপ দিতে বলা হয়। কোনও সময়ে দ্বিতীয় বারও হয়নি বলে জানিয়ে তৃতীয় এমনকি চতুর্থ বারও ছাপ নিয়ে নেওয়া হয়। এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, হতেই পারে যত বার গ্রাহক আঙুলের ছাপ দিলেন, তত বার তাঁর নামে একটি করে সিমের সংযোগ করে নেওয়া হল। কিন্তু গ্রাহকের হাতে দেওয়া হল একটিই সিম। বাকি সিমগুলি চোরাপথে চলে যায় অপরাধ চক্রের হাতে। এমনই ভুয়ো সিম দিয়ে রাজ্য জুড়ে স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও জানায় তদন্তকারীদের ওই সূত্র।

    জেলা পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘ভুয়ো নথি দিয়ে সিম কার্ড ব্যবহার করার অভিযোগের তদন্ত চলছে। জেলায় প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত এগোলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)