নদিয়ার শান্তিপুরের বিডিও এক্তিয়ার- বহির্ভূত ভাবে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন বলে অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবারের একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। শান্তিপুরের বিডিও অফিস থেকে চিঠি পাঠিয়ে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে আগামী ৫ মার্চ একটি বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বুথ স্তরের এজেন্ট তালিকা চাওয়ার কথাও লেখা রয়েছে বৈঠকের এজেন্ডায়। পাশাপাশি মৃত এবং অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারদের শনাক্তকরণের কথাও বৈঠকের এজেন্ডায় উল্লেখ রয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, নির্বাচন কমিশন কোনও নির্দেশ ছাড়াই ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত এই বৈঠক ডেকেছেন শান্তিপুরের বিডিও।
জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থাকে। তেমনই শান্তিপুরের বিডিও শান্তিপুর এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। শুভেন্দুর দাবি, ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ না-দিলে আর কোনও সংশোধন সম্ভব নয় বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। তাঁর অভিযোগ, এমন কোনও নির্দেশ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন শান্তিপুরের বিডিও।
শান্তিপুরের বিডিও অফিসের সর্বদল বৈঠক সংক্রান্ত ওই চিঠির ছবিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর দাবি, রাজ্যের শাসকদলের সুনজরে থাকতেই এই সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন বিডিও। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সমাবেশ থেকে ভোটার কার্ড সংক্রান্ত অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভুতুড়ে ভোটারদের’ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তাঁর বক্তৃতায়।
শান্তিপুরের ঘটনায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের কাছে শুভেন্দুর আর্জি, এই ধরনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক। তাঁরা যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কাজে না-থাকেন, কমিশনের কাছে সেই অনুরোধও জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
নির্বাচন কমিশনের রাজ্য দফতর সূত্রে খবর, তারাও এই ঘটনাকে এক্তিয়ার- বহির্ভূত বলেই মনে করছে। শান্তিপুরের ঘটনার কথা তারা দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসেও জানিয়েছে।
যদিও শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষের বক্তব্য, এ ধরনের বৈঠকের জন্য কমিশনের অনুমতি আবশ্যক নয়। তিনি বলেন, “এটি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস (চলমান প্রক্রিয়া)। নির্বাচন কমিশনের আলাদা অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের বুথ স্তরের প্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
শুভেন্দুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী জানান, ওই বৈঠকে শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমকেও ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিডিওর ডাকা বৈঠক অসাংবিধানিক হওয়ার অভিযোগ যখন বিরোধী দলনেতা করছেন, তখন সেই অভিযোগ প্রমাণ করার দায় এবং দায়িত্ব সবই ওঁর। যে বৈঠক বিডিও ডেকেছেন, সেখানে তো শুধু তৃণমূলের প্রতিনিধি নেই। সেখানে ওঁর দল (বিজেপি), কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে। এই বৈঠক কী ভাবে অসাংবিধানিক হয়, তা তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে।”