হাওয়ায় উড়ছে থার্মোকল, প্লাস্টিক, কাগজ। তা-ও আবার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সদর দফতরের উল্টো দিকে। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার মাঠ এখন যেন আঁস্তাকুড়। রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে, মাঠের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে রয়েছে আবর্জনা। যার জেরে দৃশ্য দূষণও তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সল্টলেকের বাসিন্দারাও।
প্রশাসন সূত্রের খবর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ওই জায়গা দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। বইমেলা প্রাঙ্গণের উল্টো দিকেই উন্নয়ন ভবনে কেএমডিএ-র সদর দফতর। তাদের চোখের সামনেই মেলা প্রাঙ্গণ কেন দিনের পর দিন এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা শেষ হয়ে গেলেও মেলার আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি এখনও। তাই জঞ্জালে ভরে রয়েছে সল্টলেকের করুণাময়ী সংলগ্ন বইমেলা প্রাঙ্গণ। বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’-ও। তাদের দাবি, তারাও অন্তত দু’-তিন বার বিধাননগর পুরসভাকে চিঠি দিয়ে আবর্জনা সাফাই করতে বলেছে। গিল্ডের কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেলা প্রাঙ্গণে আমাদের অফিস রয়েছে। আবর্জনার কারণে সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা বিধাননগর পুরসভাকে অনুরোধ করেছি, যাতে আবর্জনা সাফাই করে দেওয়া হয়। ওরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। সম্ভবত শনিবার থেকেই ওরা সাফাই শুরু করবে।’’
করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড ও বন দফতরের সেন্ট্রাল পার্কের পাশেই এই বইমেলা প্রাঙ্গণ। বিধাননগর মেলা ও বইমেলা ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি মেলা হয় সেখানে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শেষ হয়েছে। তার পর থেকেই মেলার মাঠ ওই দশায় পড়ে রয়েছে। এক দুপুরে সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, গেটে তালা। তবে, এ দিক-সে দিক দিয়ে কয়েক জন কাগজকুড়ানি মাঠে ঢুকে প্লাস্টিক, থার্মোকল, পিসবোর্ড সংগ্রহ করছেন। অন্যান্য সময়ে ওই মাঠ পরিচ্ছন্নই থাকে। কিন্তু এ বার এত দিন ধরে আবর্জনা পড়ে থাকায় অনেকেই বিরক্ত।
যদিও ওই আবর্জনা কারা সাফাই করবে, তার স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। বিধাননগর পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের দাবি, তাদের কাজ ছিল মেলা চলাকালীন মাঠ সাফাই করা। তা তারা করেছে। জায়গাটি যে হেতু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের, তাই তারা নির্দেশ দিলে সাফাইয়ের কাজ করবে পুরসভা। ওই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমনিতে মেলার মাঠ আমাদের সাফাই করার কথা নয়। জায়গাটি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের। তবে তারা যদি বলে, তা হলে অবশ্যই মাঠ পরিষ্কার করা হবে।’’ যদিও গিল্ডের দাবি, আবর্জনা সাফাই করার কথা বিধাননগর পুরসভারই।
আবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এস্টেট বিভাগ জানিয়েছে, বইমেলা প্রাঙ্গণ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে কেএমডিএ-কে। এক আধিকারিকের দাবি, কেএমডিএ আবর্জনা পড়ে থাকার বিষয়টি জানে। তারা এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে। তবে, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বইমেলা প্রাঙ্গণ বিধাননগর পুরসভাকেই পরিষ্কার করতে হবে। ওদের সে ভাবেই নির্দেশ দেওয়া আছে।’’