• সাত নামে সাতবার বিয়ে, গ্রেপ্তার হওয়ার আগের রাতেও মালাবদল করেছিল যুবতী
    বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সাত নামে সাতবার বিয়ে! এটা কোনও ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য নয়। প্রতিবারই কৌশলে অর্থ ও গয়না ছিনিয়ে যুবকদের বারবার প্রতারণা করত বাস্তবের ‘রঙ্গিলা’। নাম বদলে বিয়ে করে প্রতারণা করাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিল আয়েশা সুলতানা ওরফে পাপিয়া খাতুন। বহরমপুর থানার পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগের রাতেও এক যুবককে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে সে। একাধিক নামে তাকে চেনে সোশ্যাল মিডিয়ার যুবকরা। সাবা, তিয়াশা ও সারা নামেও কেউ কেউ তাকে জানত। নিজের আসল পরিচয় আত্মগোপন করে নানা যুবকের সঙ্গে নিমেষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ের পিঁড়িতে টেনে নিয়ে যাওয়ায় ছিল সে ছিল বিশেষ পারদর্শী। গত মাসেও সে একই কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে সিঙ্গাপুর থেকে যুবককে বহরমপুরে ডেকে এনে বিয়ে করে এক যুবতী। বিয়ের পর বহরমপুরের রাধারঘাট এলাকায় উত্তরপাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে তারা। দিন কুড়ি সংসার করার পর যুবকের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয় যুবতী। প্রতারিত হয়ে বর্ধমানের ওই মেধাবী যুবক বহরমপুর থানার পুলিসের দ্বারস্থ হয়। ওই ‘লাপাতা লেডিজ’এর খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিস বৃহম্পতিবার রাতে বীরভূম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিস। 


    বহরমপুর থানার এক পুলিস আধিকারিক বলেন, অন্যের ছবি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাব জমিয়েছিল ওই যুবতী। তারপর বিয়ে করে এক যুবককে প্রতারিত করেছে বলেই অভিযোগ। যুবতীর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি সবই অভিযোগকারী যুবকের বলেই আমরা জানতে পেরেছি। এমনকী বুধবারেও ওই যুবতী নলহাটির আরও এক যুবককে বিয়ে করেছে বলে জানা গিয়েছে।


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট এলাকার এক যুবক গবেষণার কাজে সিঙ্গাপুর থাকতেন। তাঁর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় বীরভূমের লাভপুরের ওই যুবতীর সঙ্গে। তার কথা শুনে সিঙ্গাপুর থেকে চলে আসেন ওই যুবক। কলকাতা এয়ারপোর্টে নেমে সোজা গাড়ি নিয়ে বীরভূমের ফুটিশাকো চলে আসেন তিনি। সেখান থেকে যুবকের গাড়িতে ওঠে ওই যুবতী। তাকে দেখে চমকে ওঠেন ওই যুবক। সোশ্যাল মিডিয়ায় যার ছবি দেখে প্রেমে পড়েছিলেন তিনি, সেই ছবির সঙ্গে যুবতীর কোনও মিলই নেই। প্রাথমিক ভাবে সে যুবককে জানায়, তার প্লাস্টিক সার্জারি করা আছে। সম্পত্তির জন্য অনেকেই তাকে খুন করতে চায়। তাই রূপ বদল করতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সে তার আসল রূপ লুকিয়েছে। এভাবে ভুল বুঝিয়ে, ওইদিনই ওই যুবকের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ের পর তারা বহরমপুর এসে থাকা শুরু করে। পুনরায় সার্জারি করে নিজের আগের রূপ ফিরিয়ে আনবে বলে, বারবার যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খোয়া যাওয়ার পর ধীরে ধীরে ভুল ভাঙে ওই যুবকের। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে যুবকের ল্যাপটপ, ফোন, গুরুত্বপূর্ণ সব ডকুমেন্ট নিয়ে উধাও হয়ে যায় ওই যুবতী। তার খোঁজ করে না পেয়ে পুলিসের কাছে অভিযোগ জানায় ওই যুবক। পুলিস তদন্তে নেমে রহস্যময়ী রঙ্গিলাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে রহস্য উদঘাটন করল বহরমপুর থানার পুলিস। 
  • Link to this news (বর্তমান)