করোনার পর থেকে বন্ধ বায়োমেট্রিক মেশিন খাতাতেই যেমন খুশি হাজিরা স্বাস্থ্যদপ্তরে
বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যখন বায়োমেট্রিক চালু ছিল, আঠা লাগিয়ে খারাপ করে ও নানাভাবে চলত শোধ ওঠানো। করোনার পর সে পাটও চুকেবুকে গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজগুলির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যভবনের কর্মীদের বাদ দিয়ে রাজ্যের লক্ষাধিক স্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীর হাজিরা নেওয়া এখনও চলছে মান্ধাতার আমলের হাজিরা খাতাতেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর একে একে সমস্ত দপ্তরেই আঙুলের ছাপ যন্ত্রে হাজিরা নেওয়ার পদ্ধতি চালু হয়। প্রথম তা শুরু হয় স্বাস্থ্যে, তৎকালীন প্রধান সচিব সঞ্জয় মিত্রের সময়ে। যদিও ব্যবস্থা ছিল মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক। ক’মাস যেতে না যেতে যন্ত্রকে ‘টুপি পরানোর’ নানা রাস্তা বের করে ফেলেন ফাঁকিবাজরা।
২০২০ সালে করোনা আসার পর সংক্রমণ আটকাতে স্বাস্থ্যদপ্তর আঙুলছাপ হাজিরাই বন্ধ করে দেয়। তারপর পাঁচ বছর কাটলেও দপ্তর বায়োমেট্রিক চালুর নির্দেশ নতুন করে আর দেয়নি। মেডিক্যাল কলেজগুলি এবং স্বাস্থ্যভবন ছাড়া এখন স্বাস্থ্যদপ্তরে আর কোথাও বায়োমেট্রিকে কেউ হাজিরাই দেন না। এদিকে যন্ত্রের কোম্পানির লোকজন স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে টাকা কিন্তু নিয়েই যাচ্ছে!
রাজ্যজুড়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের বিভিন্ন অফিসে কর্মীদের কাজের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা। শিফটিং ডিউটি হলে সময় (পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তনশীল) সকাল ৮টা-দুপুর ২টো, দুপুর২টো-রাত৮টা এবং রাত৮টা-পরদিন সকাল৮টা। অভিযোগ, বায়োমেট্রিক না থাকায়, ডিউটিতে যেমন খুশি আসা-যাওয়ার প্রবণতা এখন সংক্রামক রোগের মতো রাজ্যজুড়ে ছড়িয়েছে।
আসা যাক চিকিৎসকদের হাজিরা প্রসঙ্গে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মী বলেন, ‘কলকাতা থেকে বাসে করে চিকিৎসকরা বর্ধমান স্ট্যান্ডে নামামাত্রই বাইক নিয়ে নার্সিংহোমের স্টাফ দাঁড়িয়ে থাকছে। তাঁরা ‘স্যর’কে বাইকে চাপিয়ে মেডিক্যাল কলেজে নামিয়ে দিচ্ছেন। ‘স্যর’ বায়োমেট্রিক দিয়ে ফের বাইকে চেপে বসছেন। বাইক ছুটছে নার্সিংহোমে। বিকেলে বাসে ওঠার আগে ‘স্যর’কে আবার কলেজে ছেড়ে দিচ্ছে। এরপর তিনি বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিয়ে বাইকে করে সোজা বাসস্ট্যান্ড!’ কলকাতায় হাসপাতালের অদূরে নার্সিংহোমে প্র্যকটিসেও একই হাল। আর জেলায়? ওসব কোনও জেলাতেই নেই—বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের এক বড় জেলার সিএমওএইচ। তাহলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা কর্মী, আধিকারিক, চিকিৎসক কি নেই? শহরতলির এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, ‘আলবাৎ আছে। তবে দিনদিন সেই সংখ্যা কমছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অনেকবার ফোন করা হয়। ফোন ধরেননি।