‘রাস্তায় কাউকে মারব না, তাই পিলারে ধাক্কা’, জেরায় জানাল ট্যাংরা কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রসূন
বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইএম বাইপাসে মেট্রো পিলারে ধাক্কা মারার আগে আড়াই ঘণ্টা ধরে গাড়িতে কেন ঘুরেছে দে পরিবারের ‘জীবিত’ তিন সদস্য? রহস্যঘন এই প্রশ্নের জবাব অবশেষে দিলেন ট্যাংরার ব্যবসায়ী পরিবারের ছোট ভাই প্রসূন দে। জানা গিয়েছে, তিন মহিলা সদস্যকে খুনের পর দে বাড়ির দুই ভাই এবং জীবিত কিশোর সদস্য (বড় ভাই প্রণয়ের ছেলে) একজোট হয়েই ‘আত্মঘাতী’ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর আগে ভাইপোকে বিষ খাইয়ে, হাতের শিরা কেটে এবং মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খতম করার চেষ্টা করেছিল প্রসূন। কিন্তু সফল হয়নি। তারপরেও ভাইপোকে সে বোঝাতে পেরেছিল, আর বেঁচে থাকার কোনও উপায় নেই! মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ১৪ বছরের কিশোর তাতে সম্মতিও দিয়েছিল বলে পুলিসের জেরায় দাবি করেছেন প্রণয় ও প্রসূন। তারপরই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের ‘খতম’ করতে শীল লেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনজনে। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত একটা।
ওই রাতে কখনও মুম্বই রোড, কখনও নিউটাউন, আবার সবশেষে ইএম বাইপাসে তাঁরা ঘোরাঘুরি করছিলেন কেন? জেরায় তদন্তকারীদের প্রসূন জানিয়েছেন, ‘বাড়ির বউ-মেয়েরা শেষ! আমরা নিজেদের খতম করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিলাম। কিন্তু পথে অন্য গাড়িতে ধাক্কা মেরে নিরীহ কাউকে মারব কেন! সেই চিন্তা করেই বাইপাসে মেট্রো রেলের পিলারে সজোরে ধাক্কা মেরেছিলাম। কিন্তু এয়ারব্যাগ খুলে যাওয়ায়, সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হল।’ কিন্তু বাইপাসেই বা কেন? দে বাড়ির ছোট ছেলের জবাব, ‘কোনদিকে যাব, বের হওয়ার পর তা নিয়ে দাদার সঙ্গে কিছুটা ঝামেলা হয়।’ কী নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল তাদের? প্রসূন বলেন, ‘ও (দাদা) চাইছিল, ডানকুনির দিকে যেতে। ওই এলাকাটা ফাঁকা। আমি বলি, মুম্বই রোড ধরে উলুবেড়িয়া। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, কোনও ছোট গাড়ির পিছনে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারব। পরে মত পাল্টাই। আমাদের বড় গাড়ি, কোনও ছোট গাড়িতে ধাক্কা মারলে আরোহীরা সবাই মারা যাবেন। তাদের তো কোনও অন্যায় নেই। তারপর ঠিক করি, কোনও ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারব। কিন্তু সেক্ষেত্রেও ট্রাক চালকের প্রাণহানির আশঙ্কায় পরিকল্পনা বাতিল করি। ’
তদন্তকারীরা বলছেন, নিজের স্ত্রী, কন্যা ও বউদিকে খুন করার দায়ভার কার্যত নিজের কাঁধেই নিয়েছেন প্রসূন। আর তাই ধীরে ধীরে গোটা ঘটনার রহস্য উন্মোচন করছেন পুলিসের কাছে। প্রায় গোটা ঘটনারই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারার পরিকল্পনা বাতিল করার পর সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম, দ্রুতগতিতে চালিয়ে কোনও কংক্রিটের পিলারে আঘাত করব। তাই নিউটাউনে যাই। কিন্তু সেখানে পুলিস দেখে ঘাবড়ে গিয়ে সোজা চলে আসি বাইপাসে। জানতাম, রুবি পেরিয়ে রাস্তার মাঝেই কয়েকটি কংক্রিটের শক্তপোক্ত পিলার রয়েছে। সেখানে পুলিসের কেউ ছিল না। সবাই মন শক্ত করেছিলাম। চোখ বন্ধ করে সোজা গিয়ে কালিকাপুরের কাছে মেট্রো পিলারে ধাক্কা মারি। পুলিস যখন আসে, তখন প্রথমেই বলেছিলাম, ট্যাংরার শীল পাড়ার বাড়িতে আরও তিনটি বডি পড়ে রয়েছে!’