যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়: ওয়েবকুপার সভায় ব্রাত্যর উপর হামলা বাম ছাত্রদের
বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভায় বাম-অতিবাম পড়ুয়াদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আক্রান্ত হতে হল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। যেতে হল এসএসকেএমে। ভাঙা হয়েছে তাঁর গাড়ির কাচও। পড়ুয়াদের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন প্রাক্তন উপাচার্য তথা যাদবপুরের প্রবীণতম অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসও। রীতিমতো দুষ্কৃতীদের কায়দায় অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর গাড়ি থামাতে গিয়ে জখম হয়েছেন কয়েকজন পড়ুয়াও। তাঁদের একজনের আঘাত বেশ গুরুতর। গোটা ঘটনায় মোট পাঁচটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্তে নেমে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।
শিক্ষামন্ত্রী এদিন বিক্ষোভ এড়াতে ওপেন এয়ার থিয়েটারের পিছন দিক দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন। সভা চলাকালীন গেট ঠেলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। ওয়েবকুপার সদস্যরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একাংশ আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। ব্রাত্য বসুর কার্টুন আঁকা ব্যানার নিয়ে গেটের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পড়ুয়া একটি ধাতব পাইপ ছুড়ে মারেন অধ্যাপকদের দিকে। কয়েক জনের হাতে ও কাঁধে আঘাত লাগে। এরপর শুরু হয় জলের বোতল এবং অন্যান্য সামগ্রী নিক্ষেপ। ব্রাত্যবাবুকে তখন মঞ্চ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে যদি কেউ ভেসে থাকতে চায়, তাহলে বাধা দেব না।’ তিনি তৃণমূলকে স্তালিনিস্ট, লেনিনিস্ট বামপন্থা থেকে পৃথক করে দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে তুলনা করেন। তথাকথিত কমিউনিস্ট ছাত্রনেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী জীবনে ‘বিপ্লব’ ভুলে আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলিতে ছোটার প্রবণতাকে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি।
এসবের মধ্যে আন্দোলকারীদের ক্ষোভের আঁচ আরও বাড়তে থাকে। প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায় নামে এক অধ্যাপক তাঁদের হাতে জখম হন। সুমন্ত প্রামাণিক নামে এক শিক্ষকও আহত হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি এবং পুলিসের পাইলট কারগুলির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। নানা কটূক্তি যখন ধেয়ে আসছে, তখনও এসএফআইয়ের দুই প্রতিনিধির বক্তব্য শুনছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। বাইরে তখন অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলি দাবি করে, তাদের থেকে অন্তত ৪০ জনকে ঢুকতে দিতে হবে। পরে শিক্ষামন্ত্রী বাইরে বেরিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন। তারপরও অন্তত আধঘণ্টা তাঁকে ঘেরাও করে রাখে ছাত্ররা। শেষে যখন গাড়ি বেরতে যায়, তখন বনেটে উঠে, সামনে থেকে ঠেলে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় গাড়ির সামনে পড়ে জখম হন আরএসএফের সদস্য ইন্দ্রানুজ রায়। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর বাবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ও টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির সেক্রেটারি অমিত রায় ঘটনার কথা শুনে কার্যত আকাশ থেকে পড়েন। ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল বের করেন পড়ুয়ারা। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে শনিবার পাল্টা মিছিল করে তৃণমূলও। আজ প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে বামেরা।