দীর্ঘদিন ধরে অটিজমে আক্রান্ত মেয়ে, অবসাদে আত্মহত্যা, অফিস ঘরে বাবা ও মেয়ের ঝুলন্ত দেহ
বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ছোট থেকেই অটিজমে আক্রান্ত মেয়ে। ২২ বছর ধরে টানা চলছে তাঁর চিকিৎসা। শুক্রবারও সকালে মেয়েকে নিয়ে পিজিতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু, দুপুর থেকে আচমকাই উধাও দু’জনে। সন্ধ্যায় সরশুনার নিজের কারখানার অফিস থেকে ব্যবসায়ী ও তাঁর মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। মৃতদের নাম সজন দাস (৫৩) ও সৃজা দাস (২২)। দক্ষিণ ২৪ পরগনার আশুতি কালীতলা থানা এলাকার নুঙ্গির বাসিন্দা তাঁরা। পর্ণশ্রী থানা এলাকার শকুন্তলা পার্কে হো-চি-মিন সরণিতে কাঠের কারখানা রয়েছে সজনবাবুর। শনিবার দেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিস। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাবা ও মেয়ে একসঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও ঘটনাস্থলে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পর্ণশ্রী থানা।
সম্প্রতি ট্যাংরা থানা এলাকায় ঋণের দায়ে পরিবারের সবাইকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী পরিবারের দুই ভাই। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে শুক্রবার রাতে সরশুনায় এই আত্মহননের ঘটনা ঘটল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জেনেছে, ছোটবেলা থেকেই অটিজমে আক্রান্ত কন্যার চিকিৎসার বিরাট খরচ সামলাচ্ছিলেন সজনবাবু। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সোয়া একটা নাগাদ পিজিতে যান। সেখান থেকেই স্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। কিন্তু তারপর বিকেল হয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি বাবা-মেয়ে। গৃহকর্ত্রী জলি দাস বলেন, পরপর ফোন করে গিয়েছি। কিন্তু রিং হয়ে গিয়েছে। কেউ ধরেনি। সন্দেহ হওয়ায় সরশুনার কারখানাতে পাঠাই এক প্রতিবেশীকে। তিনিই গিয়ে দেখেন কারখানার অফিসের ঘরের দরজা ভেজানো। সেই ঘর ঠেলতেই দেখা যায় বীভৎস দৃশ্য। বলতে বলতেই শোকে প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলেন জলিদেবী। লালবাজার জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকেই রাত ৮টা নাগাদ থানায় ফোন করে এক ব্যক্তি গোটা বিষয়টি জানান। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পর্ণশ্রী থানার বিশাল টিম। প্রাথমিকভাবে পুলিসের সন্দেহ, মেয়েকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা। প্রাথমিক নমুনা সংগ্রহ করতে পৌঁছে যায় হোমিসাইড শাখা, সায়েন্টিফিক শাখা, ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা। তদন্তের কাজ শেষে বাবা ও মেয়েকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার প্রায় তিনঘণ্টার ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু’জনেই একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তাঁদের গলায় যে আঘাত রয়েছে, তা আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে।