সৌমিত্র ঘোষ, বেলুড়
বসন্ত উৎসবের ঢের দেরি, তবু শীতের বিদায় লগ্নে বসন্তের রঙ ইতিমধ্যেই ছুঁয়ে যাচ্ছে মানুষের মন। ফাগুনের রঙ ছড়িয়ে অশোক, পলাশ, শিমুলে সেজে উঠেছে বাংলার গাঁ-গঞ্জ। কোথায় গেলে পাবো সেই পলাশ রঙের ছোঁয়া, তার খোঁজেই কেউ ছুটেছেন পশ্চিমে বাঁকুড়া পুরুলিয়া ঝাড়গ্রাম–সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন কোণে। তবে যাঁরা সেখানে যেতে পারছেন না, তাঁদেরও খোঁজ উপচে পড়ছে সমাজ মাধ্যমে। কলকাতার কাছাকাছি কোথায় গেলে পাব সেই ময়নামতির গাঁ? যেখানে লাল লাল পলাশ ফুটেছে?
কলকাতার কাছেই মিলেছে সেই পলাশ বনের খোঁজ। আর সেখানে পৌঁছতে প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বেলুড়ের পলাশ বনে। শহর থেকে এত কাছে, রঙের আগুনে মেতে উঠছেন পলাশপ্রেমীরা। ফেসবুক গ্রুপের বন্ধুরা মেতে উঠেছেন পলাশ উৎসবের নামে। ফাল্গুন–চৈত্রের এই সময়টায় পলাশ দেখতে বেলুড়ের কোথায় যেতে হবে, কী ভাবে যেতে হবে, এই প্রশ্ন সমাজমাধ্যমে প্রতি বছর ঘুরতে থাকে। চটজলদি উত্তরও মিলছে সেখানেই।
বেলুড়ের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ইএসআই হাসপাতাল। হাওড়া থেকে ট্রেনে বেলুড় স্টেশন। সেখান থেকে প্রায় ২ কিমি পশ্চিমে যেতে হবে সেখানে পৌঁছতে। এখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা জুড়ে কয়েক দশক আগে প্রচুর বৃক্ষরোপণ হয়েছিল। সেই সব শিশু গাছই এখন রীতিমতো মহীরুহ হয়ে গড়ে উঠেছে পলাশ বন। পুরোদস্তুর বসন্ত–আগমনের আগেই সেই পলাশ বন রেঙে উঠেছে নানা রঙের পলাশে, শিমুলে। তা দেখতে দূর–দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসছেন পলাশের রঙে মন রাঙিয়ে নিতে। কেউ বানাচ্ছেন রিল, কেউ ফোটোগ্রাফির চর্চা করছেন বহুবর্ণী পলাশের জলসায়।
ইএসআই হাসপাতালের চত্বর জুড়ে অন্তত শতাধিক গাছ পলাশ, শিমুল–সহ নানা ফুলে রেঙে ওঠায় এখানে প্রচুর পাখির হাজিরাও লক্ষ করা যাচ্ছে। পাখির টানে আসছেন অনেক ফোটো–শিকারির দল। ভোর থেকেই পাখি–প্রেমীরা হানা দিচ্ছেন পলাশবনে। বেলা বাড়লে ভিড় বাড়ছে অন্যদেরও। কেউ সেখানে গেয়ে উঠছেন ‘ও শিমুল বন দাও রাঙিয়ে মন, কৃষ্ণচূড়া দোপাটি আর পলাশ দিল ডাক’। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও নিজের সুরে শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে এ গান এক সময়ে প্রথম প্রেমে পড়া ছেলেমেয়েদের ঠোঁটে লেগে থাকত। সেই পলাশের ডাক উপেক্ষা করবে কে?