• নজরদারি বাড়িয়েও চালের দাম সেই নাগালের বাইরেই, নাজেহাল আমজনতা
    এই সময় | ০২ মার্চ ২০২৫
  • অবস্থা এতটাই উদ্বেগজনক যে, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক ডাকতে হয়েছিল রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নে। সেই বৈঠক থেকে রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ইবি) এবং টাস্ক ফোর্সকে বাজারে-গুদামে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে।

    নবান্নের সেই বৈঠকের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ। কিন্তু তার পরেও চালের দাম কমেনি। এই অবস্থায় দু’বেলা ডাল–ভাত জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ বাঙালিকে। কারণ, চাল কিনতে গিয়ে দামের ছেঁকা খেতে হচ্ছে। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে চালের কালোবাজারি যে হচ্ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হলেও এখনও পর্যন্ত তার প্রমাণ পায়নি ইবি। প্রশাসন সক্রিয় হওয়ার পরেও চালের দাম নাগালে না–আসায় মধ্যবিত্তের রেহাই মিলছে না।

    খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভালো চাল হিসেবে যেগুলো পরিচিত, সে সব পাচার করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। তার ফলেই বাজারে চালের এমন সঙ্কট। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও সাম্প্রতিক অতীতে চালের দাম এতটা বাড়েনি।

    চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতির শুরু মাস খানেক আগে থেকে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রায় প্রত্যেক বছরই বাজারে পুরোনো চালের দাম কিছুটা বাড়ে। খুচরো ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সেই দামও কেজিতে ৫ টাকার বেশি বাড়েনি সাম্প্রতিক অতীতে। অথচ এ বার সেখানে কেজিতে ১০-২০ টাকা দাম বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়ে যাওয়া মানেই ২৬ কেজির বস্তার দাম এক ধাক্কায় ২৬০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

    রাজ্যে রেশন দোকানগুলোয় ২ টাকা কেজি দরে চাল মেলে। এটা মূলত স্বর্ণ ধানের চাল। রেশন গ্রাহকদের একাংশ এই চালের ভাত খেলেও অন্য একটা অংশ সেই চাল বাজারে বেচে দিয়ে, আর একটু দাম দিয়ে তুলনায় ভালো চাল কিনে নেন। কিন্তু বাজারে চালের দাম এতটা বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের অধিকাংশই আর ভালো চাল কিনে খেতে পারছেন না। তাঁরা এখন খাচ্ছেন রেশনের চাল–ই।

    একটু ভালো চাল হিসেবে রাজ্যে সব চেয়ে বেশি চাহিদা মিনিকেট-এর। মাস খানেক আগেও খুচরো বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছিল কেজি প্রতি ৫০ টাকা দরে। কিন্তু জানুয়ারির শেষ দিকে আচমকাই তার দাম প্রথমে কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ল এবং কয়েক দিনের মধ্যে আরও বেড়ে সেটা ৬০ টাকা ছুঁয়ে ফেলল। মিনিকেটের পরেই মানুষের পছন্দের চাল বাঁশকাঠি। সেই চালের দাম কেজিতে ৫৭-৫৮ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭০ টাকা।

    ভাত ছাড়া বাঙালির দিন অচল। দাম বাড়লে আনাজ, আলু-পেঁয়াজের খরচ কমিয়ে দিলেও চালের খরচ কমানো প্রায় অসম্ভব। ফলে যাঁরা আগে মিনিকেট চালের ভাত খেতেন, তাঁরা কম দামের রত্না চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁরা বাঁশকাঠি চাল কিনতেন, তাঁদের অনেকেই কিনছেন মিনিকেট।

    চালের দাম এমন হু হু করে বাড়ছে কেন? খুচরো ব্যবসায়ীদের সাফ কথা, তাঁদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, ফলে চালের দাম বাড়ানো ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই। অভিযোগ, চালের কিছুটা ঘাটতি আছে বুঝেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের একাংশ চাল মজুত করে বেশি দামে তা বাজারে বেচছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন অস্থির। সে দেশে সব কিছুরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেখানে ভালো চালের দাম আকাশছোঁয়া। অভিযোগ, এই মওকায় আলু যেমন পাচার করা হয়েছে, তেমনই ভালো চাল বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

    পাইকারি ব্যবসায়ীরা অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে চাইছেন না। রাজ্যে সব চেয়ে বড় চালের বাজার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায়। সেখানকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি সাগর সাহা বলেন, ‘চালের অভাব রয়েছে। তবে বাংলাদেশে চাল পাচার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা পাঞ্জাব-দিল্লি থেকে ভালো চাল আনছি। তাতে দাম কিছুটা কমেছে।’ তবে পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরো বাজারে চালের দাম কমেনি। রাইস মিল সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মালেকের বক্তব্য, ‘মিনিকেট বা বাঁশকাঠির মতো পছন্দের চালের দাম বেড়েছে। এপ্রিল-মে মাসে এই ধান উঠলে দাম কমবে।’

    রাজ্য সরকারের তৈরি করা টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘চালের মজুতদারি আমাদের নজরে আসেনি। ফলে নতুন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)