• ময়ূরেশ্বরে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সুস্থ করে তোলাই চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের
    বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টিকর খাবার জুগিয়ে সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নিল ময়ূরেশ্বর-১ পঞ্চায়েত সমিতি। শনিবার দুপুরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ শোভন দে, বিডিও আবুল আলা মাবুদ আনসার প্রমুখ। পঞ্চায়েত সমিতির মতে, এলাকায় কোনও অপুষ্ট শিশু যাতে না থাকে সেবিষয়ে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে। অপুষ্টি রোধে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। প্রত্যেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। পাশপাশি, সদ্যোজাত থেকে ছ’বছর বয়সি শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়েছিল। স্বাস্থ্যদপ্তর এই ব্লকে সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে, এখানে বিভিন্ন গ্রাম মিলিয়ে ৭২জন অপুষ্ট শিশু অর্থাৎ ‘লাল’ তালিকাভুক্ত বাচ্চা রয়েছে। সকলেই দুঃস্থ পরিবারের। বিশেষ করে নাবালিকা মায়েদের সন্তানই অপুষ্টিতে ভুগছে। জেলার মধ্যে নাবালিকা বিয়ের নিরিখে প্রথমে রয়েছে ময়ূরেশ্বর-১ ব্লক। স্বভাবতই এখানে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। এবার সেই শিশুদের পুষ্ট করে তুলতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। এদিন অনুষ্ঠানে লাল তালিকায় থাকা শিশুদের অভিভাবকদের হাতে এক মাসের পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা হয়। বিএমওএইচ সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে ও সন্তান প্রসব করার কারণেই শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বাড়ছে। কারণ মা পুষ্টি পায়নি, বাচ্চাও পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষে নাবালিকা বিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। তবে নাবালিকা অবস্থায় যাতে গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সেই চেষ্টায় রয়েছি আমরা। তিনি বলেন, পুষ্টির দিক দিয়ে শিশুদের লাল, হলুদ ও সবুজ হিসেবে ভাগ করা হয়। হলুদ বাচ্চাকে পুষ্টিযুক্ত খাবার দিয়ে সবুজে আনা সম্ভব। কিন্তু লাল তালিকায় থাকা শিশুদের সবুজে আনা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। যদিও বা আনা যায় সেটা ‘রেয়ার’। কিন্তু সেই লাল বাচ্চাদের যদি বিশেষ খাবার দিয়ে পুষ্টি জোগানো যায় তাহলে তার ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধি কিছুটা সম্ভব। পঞ্চায়েত সমিতির এই চ্যালেঞ্জের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।


    সভাধিপতি বলেন, আমরা বাল্য বিবাহ রুখতে না পারলে অপুষ্টিজনিত রোগে মা মারা যাবে, বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগবে। তাই সবার প্রথমে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। জেলার অন্যান্য পঞ্চায়েত সমিতিও একইভাবে এগিয়ে আসবে বলে আশা করি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ব্লকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আমরা। সেইমতো এদিন সেই শিশুদের পরিবারের হাতে এক মাসের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হল। যতদিন না সেই শিশু হলুদ বাচ্চার তালিকায় আসছে ততদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে। এদিন এই ব্লকের থ্যালাসেমিয়ায় ভোগা ২০টি শিশুর পরিবারের হাতেও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়েছে। যাতে পুষ্টি পেয়ে তাদের রক্ত দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো যায়।  


    (অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশুর অভিভাবকের হাতে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিচ্ছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। -নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)