রেজিস্ট্রেশনের পর ‘উধাও’ পূর্ব বর্ধমানের প্রায় ২৩ হাজার পড়ুয়া
বর্তমান | ০২ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: রেজিস্ট্রেশন করার পর ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ২২হাজার ৯০১জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল ৪১হাজার ২৪১জন ছাত্রছাত্রী। পরীক্ষায় বসছে ১৮হাজার ৩৪০জন পড়ুয়া। এতজন পড়ুয়া অনুপস্থিত থাকায় উদ্বিগ্ন শিক্ষামহল। অনেকেই ট্যাবের টাকা নিয়ে পড়াশোনা ছেড়েছে। আবার বহু ছাত্রী পরীক্ষায় বসার আগেই শ্বশুরবাড়ি রওনা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, করোনার পর থেকেই এই প্রবণতা বেড়েছে। মাঝপথেই অনেকে পড়াশোনা ছাড়ছে। বিভিন্ন ক্লাসে এই প্রবণতা বেড়েছে। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ড্রপআউট কমাতে তিনি তাঁদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কী কারণে মাঝপথে পড়ুয়ারা পড়াশোনা ছাড়ছে তার কারণ খোঁজার জন্য বলা হয়েছে। বহু ছাত্রী ১৮বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, ভাতারের মতো ব্লকগুলিতে এই প্রবণতা বেশি। কেতুগ্রাম-২ ব্লকে ২৭ শতাংশ নাবালিকা বিয়ের পর গর্ভবতী হয়েছে। নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করার জন্যও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ড্রপআউট কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এবারও ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা বেশি সংখ্যায় পরীক্ষায় বসতে চলেছে। ১০হাজার ২৬৪জন ছাত্রী পরীক্ষায় বসছে। আট হাজার ৭৬জন ছাত্র পরীক্ষা দেবে। জেলায় মোট ভেনুর সংখ্যা ৯৩টি। কালনায় ১৮, কাটোয়ায় ১৫, বর্ধমান উত্তরে ৩৯ এবং বর্ধমান দক্ষিণে ২১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ছাত্রীরা বেশি সংখ্যায় পরীক্ষায় বসতে চলেছে। এটা ভালো ইঙ্গিত। কিন্তু এটাও ঠিক, বহু ছাত্রী একাদশ শ্রেণির পর পড়াশোনাও ছেড়েছে। ছাত্রদের মধ্যেও এই প্রবণতা রয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষাদপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার পরও বহু ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা ছাড়ছে। এটা যথেষ্টই উদ্বেগের। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও বহু ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারপরও ১৮ বছরের আগে তারা বিয়ের আসরে বসছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, অনেকে ট্যাবের টাকা পাওয়ার জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে। টাকা পাওয়ার পর আর স্কুলমুখো হচ্ছে না। একইভাবে কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়ার পর অনেক ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে আসছে না। অন্য কী কারণে ছাত্রছাত্রীরা রেজিস্ট্রেশন করার পরও পরীক্ষা দিচ্ছে না, তা শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবেন। মাঝপথে যাতে পড়ুয়ারা পড়াশোনা না ছাড়ে তারজন্য প্রয়োজনে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। জেলায় কয়েক বছর ধরেই ছাত্রীরা বেশি সংখ্যায় পরীক্ষায় বসছে। কন্যাশ্রীর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যই এটা সম্ভব হচ্ছে।