সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিগত পাঁচ বছরের স্মৃতি। ফেলুদা হওয়ার প্রথম স্বপ্নপূরণ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। নেপথ্যের কারিগরকে কি আর এত সহজে ভোলা যায়? আর কোনওদিন সৃজিতের ফ্রেমে ফেলুদার গোয়ন্দাগিরি ধরা পড়বে না। কারণ সৃজিত মুখোপাধ্যায় আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি আর ‘ফেলুদা’, ‘কাকাবাবু’ পরিচালনা করবেন না। সেই প্রেক্ষিতে টোটা রায়চৌধুরিকে নিয়ে সত্যান্বেষণের দায়িত্বভার বর্তেছে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাঁধে। পাঁচ বছরের ‘ফোর মাস্কেটিয়ার্স’-এর পথ এখন আলাদা। কমলেশ্বরের হাত ধরে ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ নিয়ে নতুন পথ চলা শুরু করবেন টোটা রায় চৌধুরী। তার প্রাক্কালেই ক্যাপ্টেন সৃজিতের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খোলা চিঠি লিখলেন ওটিটি পর্দার ‘ফেলুদা’।
প্রথম যেবার ফেলুদার শুটিং করলেন, সেইসময় তোলা ক্যামেরার এক নেপথ্যফ্রেম শেয়ার করেছেন টোটা। আরেকটি ছবি কাশ্মীরে ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ শুটের সময় তোলা। একফ্রেমে ফেলুদা, জটায়ু এবং তোপসে। দুটি ছবি শেয়ার করে স্মৃতিচারণায় অভিনেতা। টোটা লিখেছেন, “ওপরের ছবিটি ২৪শে ডিসেম্বর, ২০১৯-এ তোলা। আপাতদৃষ্টিতে চেহারায় আলগা নিশ্চিন্ততা পরিস্ফুট হলেও পেটে প্রজাপতির অবিরাম ওড়াওড়ি। স্বপ্নের চরিত্রে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কয়েক রাউন্ড তুমুল গালমন্দের সম্মুখীন হয়ে ‘ফেলুদা’র সেটে আমার প্রথম দিন। তার ওপর দুই সুউচ্চ পর্বতপ্রমাণ প্রবাদপ্রতিমদের সঙ্গে তুলনা হওয়ার ভয় পরিচালকের বরাভয়েও কাটছে না। ফেলুদা হওয়ার প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ, এখনও অবশ্য হয়ে উঠতে পারিনি তবে চেষ্টায় রয়েছি। এবং ত্রয়ীর পথচলার হাঁটি হাঁটি পা পা। নিচের ছবিটি ২৫শে মার্চ, ২০২৪-এ তোলা। ততদিনে দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে দুটো সিজন স্ট্রিম হয়ে গিয়েছে। বহুল সংখ্যক দর্শক এই ত্রয়ীকে গ্রহণ করেছেন এবং বেশ কিছু মানুষ নিজগুণে আপন করেও নিয়েছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা। এক শ্রেণীর গালাগাল অবশ্য এখনও পিছু ছাড়েনি তবে চামড়া এখন কাজিরাঙ্গার রাইনো! স্বর্গীয় পরিবেশে ফেলুদা বেশে ভূস্বর্গে সে মুহূর্তে আবহ ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’! তখনও জানি না যে এটাই ‘ক্যাপ্টেন’-এর নেতৃত্বে আমাদের শেষ ইনিংস।”
এরপরই সৃজিতের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে টোটার সংযোজন, “গত পাঁচ বছরে, ফোর মাস্কেটিয়ার্স, চারটে সিজন করলাম দুটো আলাদা প্ল্যাটফর্মে। একটা সিজনের স্ট্রিমিং অবশ্য এখনও হয়নি। তবে দুটো প্ল্যাটফর্মেই দর্শকসংখ্যায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে সৃজিত মুখুজ্জের ফেলুদা। সেটা অবশ্যই রায়সাহেবের স্বর্ণলেখনী এবং কিংবদন্তি চরিত্রের অমরত্ব হেতু। তবে তৎসহ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ফেলুদাপ্রীতি, সত্যজিৎ-ভক্তি ও পরিচালনার মেধা, মুন্সিয়ানাকে কৃতিত্ব দেওয়া না হলে সেটা নিছক নিন্দুকের একচোখামি হবে, সমালোচকের নিরপেক্ষতা নয়।”
এবার নতুন পরিচালক, নতুন জার্নি। সেকথা স্মরণ করেই টোটার মন্তব্য, “এবার ত্রয়ী পথ চলবে আরেক শক্তিশালী পরিচালকের হাত ধরে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গভীরতা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা সর্বজনবিদিত। আশা করি এবারও আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা প্রাপ্তি হবে। তবে বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই যে, সৃজিত মুখোপাধ্যায় যদি স্রোতের বিপরীতে সন্তরণ করে আমার উপর বিশ্বাস না রাখত এবং পরবর্তীতে মাতৃসম স্নেহে আমায় ফেলুদার চরিত্রে গড়ে না তুলত, তাহলে আজ আমার একমাত্র স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যেত। আর হ্যাঁ, ফেলুদারূপে সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি, দোষ, খামতি একান্তই আমার অক্ষমতা প্রসূত। পরিচালকের ধৈর্য, নিষ্ঠা ও সক্ষমতা সত্ত্বেও। ক্ষমা করে দিও ক্যাপ্টেন। আর আশা করি জীবনপথের কোনও বাঁকে আবার দেখা হয়ে যাবে। তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আজীবনের। ভালো থেকো। ভালবাসা নিও।” টোটা রায়চৌধুরীর লেখা সেই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও।