• কুমোরটুলি কাণ্ড: কতক্ষণে দেহে পচন, জানতেন নার্স আরতি
    এই সময় | ০২ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, মধ্যমগ্রাম: দমদম সেন্ট্রাল জেলে এখন রয়েছেন ফাল্গুনী ঘোষ ও তাঁর মা আরতি ঘোষ। শনিবার সেই জেলে গিয়ে টিআই প্যারেড হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তে উঠে এসেছে ফাল্গুনীর মা আরতি একসময়ে একটি নার্সিংহোমে নার্সের কাজ করতেন। ফলে মৃত্যুর পর দেহে কতক্ষণে পচন ধরে, সে সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণা ছিল। তাই সুমিতা ঘোষকে খুনের পর দেহ বাড়িতে রেখে মা–মেয়ে নিশ্চিন্তে কলকাতায় ট্রলি ব্যাগ কিনতে বেরিয়েছিলেন।

    গত মঙ্গলবার মধ্যমগ্রামের দক্ষিণ বীরেশপল্লি থেকে দোলতলা পর্যন্ত ভ্যানে ট্রলি–বন্দি পিসিশাশুড়ি সুমিতার দেহ নিয়ে এসেছিলেন ফ্লাগুনী ও তাঁর মা। তারপর ট্যাক্সির ডিকিতে চাপিয়ে কলকাতার কুমোরটুলি গঙ্গার ঘাটে যান। সেদিনের ভ্যানচালক, ট্যাক্সিচালক ছাড়াও বীরেশপল্লিতে এবং কুমোরটুলিতে যাঁরা ট্রলি সমেত মা–মেয়েকে দেখেছিলেন তেমন আট জনকে দিয়ে শনিবার দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে টিআই প্যারেড করানো হয়।

    পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা ফাল্গুনী এবং আরতিকে চিনতে পেরেছেন। এ বার কুমোরটুলি এবং মধ্যমগ্রামের কয়েকজনের গোপন জবানবন্দিও নিতে চাইছে পুলিশ।

    জানা গিয়েছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি অসম থেকে কলকাতায় এসেছিলেন সুমিতা। শিয়ালদহে নামার পরেই ফাল্গুনী ফোন করে তাঁকে বীরেশপল্লির বাড়িতে আসার জন্যে জোরাজুরি করেন। তাঁর কথাতেই সুমিতা এসেছিলেন বলেই পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে। ফাল্গুনীর মা আরতির উইডো পেনশনের টাকায় সংসার চলত। দিনে দিনে সংসারের খরচও বেড়ে গিয়েছিল।

    তদন্তে উঠে এসেছে, সুমিতার টাকা ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ছক ছিল ফাল্গুনীর। গত রবিবার রাতে সুমিতার সঙ্গে অশান্তি হয় ফাল্গুনীর। সেই রাতেই ফাল্গুনীর ইটের আঘাতে বীরেশপল্লির ভাড়াবাড়িতে খুন হন সুমিতা। খুনের পর দেহ লোপাট করতে গঙ্গায় ফেলার পরিকল্পনা করে মা–মেয়ে। আরতি যে হেতু একসময়ে নার্সের কাজ করতেন, জানতেন কত ঘণ্টা পর থেকে পচন শুরু হয়। পরের দিন সকালে উঠেই দু’জনে কলকাতার বড়বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই পেল্লাই সাইজের নীল রঙের ট্রলি ব্যাগ কিনে বাড়ি ফেরেন। মঙ্গলবার সকালে সেই ট্রলিতে বন্দি পিসিশাশুড়ির দেহ গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যান দু’জনে।

    সুমিতা ঘোষের গোড়ালি কাটা দেহ উদ্ধার করে নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ। এর পর খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলা মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

    বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘ধৃত দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দু–একদিনের মধ্যেই ধৃতদের হেফাজতে পেয়ে যাব। তার পর ঘটনার রাতে ঠিক কী কী বিষয়ে ঝামেলা হয়েছিল, তা জানতে জেরা করা হবে। আমি নিজেই ওদের জেরা করব।’

  • Link to this news (এই সময়)