আশিস নন্দী, বারাসত
ভোলার গায়ের রং কুচকুচে কালো। নাদুসনুদুস চেহারা। জন্ম বারাসতের নেতাজিপল্লির স্থানিয় বাসিন্দা দীনবন্ধু সরকারের বাড়িতে। একটু বড় হওয়ার পরেই ভোলাকে ছেড়ে দেন দীনবন্ধু। সেই থেকে প্রতিদিন সকালে নেতাজিপল্লির বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাবার খেত ভোলা।
তার পর হেলাবটতলা বাজার, কলোনি মোড় হয়ে ব্রিজ টপকে চলে আসত বড়বাজারে। সেখানে দোকানে দোকানে ঘুরে খাবার খেয়ে একই রুট ধরে ফিরে আসত নেতাজিপল্লিতে। গত ৪০ বছর ধরে এটাই ছিল ভোলার রোজনামচা।
দু’দিন আগে বারাসতের একটি সিনেমা হল সংলগ্ন ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ভোলার। তবে ভোলা কোনও মানুষের নাম নয়। সে আসলে একটি ষাঁড়। গত ৪০ বছর ধরে এলাকার বাজারে ঘুরে বেড়ানো ভোলা হয়ে উঠেছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীদের আপনজন।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর ভোলার আত্মার শান্তি কামনায় সাড়ম্বরে তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। শ্রাদ্ধের পাশাপাশি কীর্তন, হোমযজ্ঞ এমনকী ভূরিভোজের ব্যবস্থাও করেছিলেন নেতাজিপল্লির বাসিন্দা এবং ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ব্যবসায়ীরা। শ্রাদ্ধে ভোলার পছন্দের পাঁউরুটি এবং বিস্কুট উৎসর্গ করা হয়েছিল। বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগ নিয়ে ক্রেনের মাধ্যমে ভোলাকে রাস্তা থেকে তোলার ব্যবস্থা করেন। ভোলার দেহ সৎকারও করা হয়।
বাড়ির পোষ্য মারা গেলে অনেকেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। কিন্তু রাস্তার ষাঁড়ের মৃত্যুতে ধুমধাম করে শ্রাদ্ধের আয়োজন বড় একটা চোখে পড়ে না। নেতাজিপল্লির বাসিন্দা শঙ্কর সরকার বলেন, ‘ভোলাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি। সব বাসিন্দারাই ওকে খুব ভালোবাসত। যে যা দিত, তাই খেত। কখনও জোর করে কিছু কেড়ে খায়নি। কেউ চলে যেতে বললে, সঙ্গে সঙ্গে চলে যেত। এই রাস্তায় অনেক মানুষ চলাফেরা করেন। কিন্তু কাউকে একদিনের জন্যও গুঁতোয়নি ভোলা।’
স্থানীয় দোকানদার সত্যজিৎ সরকার বলেন, ‘বাজারে দোকানের সামনে দাঁড়ালে দোকানদাররা যা দিত, সেটাই খেত ভোলা। তবে পাঁউরুটি আর বিস্কুট ছিল ওর সবচেয়ে পছন্দের। ও আমাদের কাছে ঘরের একজন ছিল। ওর আত্মার শান্তি কামনায় আমরা শ্রাদ্ধ থেকে কীর্তনের ব্যবস্থা করেছি।’
রাস্তার ধরেই প্যান্ডেল বেঁধে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। মেনুতে ছিল খিচুড়ি, আলুর দম আর চাটনি। পুরোহিত পার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘বাড়ির পোষ্যের মৃত্যুতে শ্রাদ্ধের কাজ করেছি। কিন্তু রাস্তার ষাঁড়ের দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে এমন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আগে কখনও করিনি। ওর আত্মা শান্তি পাক।’