• ‘কাকা আমাকে চারবার খুনের চেষ্টা করেছে’, বিস্ফোরক দে পরিবারের কিশোর
    প্রতিদিন | ০২ মার্চ ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: ‘কাকা আমাকে চারবার খুনের চেষ্টা করেছিল। তবুও আমি মরিনি। জীবনে বড় হতে চাই।’ শনিবার হাসপাতালের বেডে বসে পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছে ট্যাংরার অভিজাত দে পরিবারের নাবালক। তার কথায়, বাবা-কাকার ব্যবসার অবস্থা যে ভালো নয়, তা সে জানত। তার মা সুদেষ্ণ দে তাকে ভরসা করে অনেক কথা বলতেন। সেও বিভিন্ন ব্যাপারে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করত। কিন্তু আত্মহত্যার পরিকল্পনা তাকে বা তার দিদিকে জানানো হয়নি।

    গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তার মা ও কাকিমা তার হাতে পায়েসের বাটি তুলে দেন। কাকা তাকে খেতে বলেন। পায়েস খাওয়ার সময় তার সন্দেহ হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে প্রতীপ। ওষুধ মেশানো পায়েস তাকে না জানিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। কাজেই প্রতীপের মতে, সেটাই তাকে খুনের প্রথম চেষ্টা। তার কথায়, পরদিন কাকা তাকে জীবিত দেখে প্রথমবার তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করে। সে নিশ্বাস বন্ধ করে কোনওমতে বেঁচে যায়। তারপর বাবার সামনেই কাকা তার হাত কেটে খুন করার চেষ্টা করেন। প্রতীপের দাবি, তার মৃত্যু না হওয়ায় প্রসূন ফের ছুরি দিয়ে তার হাত বা গলা কেটে তাকে খুন করার চেষ্টা করে। যদিও ওই সময় তার বাবা কাকাকে বাধা দেন। ভাইকে প্রণয় বলেন, ছেলেকে ছেড়ে দিতে। ওকে মারতে হবে না। দোতলায় এই ঘটনার পর বাবা ও কাকা তাকে নিয়ে তিনতলায় উঠে যান।

    ভাইপো এই বয়ান দিয়েছে, তা জানতে পেরেই পুলিশের সামনে মেজাজ হারাচ্ছেন ছোট ছেলে প্রসূন দে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিরক্ত হয়ে প্রসূন পুলিশ অফিসারদের বলেন, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই এখনই কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে চান না।

    উল্লেখ্য, একদিন আগেই প্রসূন স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তিনি স্ত্রী ও বউদির হাতের শিরা ও গলা কেটে খুন করেছেন। যদিও মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেননি তিনি। পুলিশের ধারণা, প্রসূন হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁর দিকেই আঙুল যাচ্ছে। সেই কারণে পুলিশের সামনে আর মুখ খুলতে চাইছেন না। যদিও গ্রেপ্তারির আগেই ফের প্রসূনকে জেরা করতে চায় পুলিশ। একই সঙ্গে কীভাবে প্রসূন এতটাই নৃশংস হলেন, সেই উত্তরও খুঁজছে পুলিশ।

    এদিকে সূত্রের খবর, দাদা ও ভাইপো যে খুনের ঘটনায় তার উপরে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, তা জানতে পেরে রেগে যাচ্ছেন প্রসূন। বার বার বেডে শুয়েই যে পুলিশ কর্মীরা পাহারায় রয়েছেন, তাঁদের কাছেও নিজের সাফাই গাওয়া চেষ্টা করছেন। আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কাছে গেলেই মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন দে পরিবারের ছোট ছেলে। হাসপাতাল কর্মীদের বারবার বলছেন বুকে ব্যথা। কথা বলতে পারছেন না তিনি।

    দে পরিবারের বড় ছেলে প্রণয় দে পুলিশকে জানিয়েছে, শুধু গাড়ি ধাক্কা দেওয়ার জন্য মনোমতো জায়গা খুঁজে পাননি তাঁরা। প্রথমদিকে কোনও গাড়িতে বা তার পর কোনও দেওয়ালে মুখোমুখি ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ পাননি। সেই কারণেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ট্যাংরার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান তাঁরা। এর পরই এম বাইপাসে উঠে গাড়ির ধাক্কা দেন মেট্রো রেলের পিলারে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)