• যাদবপুরের ঘটনায় গ্রেফতার এক, সাত এফআইআর! রাত পর্যন্ত চলল জিবি, সকালে থমথমে ক্যাম্পাস
    আনন্দবাজার | ০২ মার্চ ২০২৫
  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় এক পড়ুয়াকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ইতিমধ্যে শনিবারের অশান্তি সংক্রান্ত সাতটি এফআইআর দায়ের হয়েছে যাদবপুর থানায়। তার মধ্যে তিনটিই ওয়েবকুপার তরফে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এমন নানা অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে ওয়েবকুপা। অপর দিকে, ক্যাম্পাসে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে পড়ুয়াদের তরফেও এফআইআর দায়ের হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কে বা কারা, শনিবারের অশান্তিতে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, শনিবার রাতে যাদবপুরে ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত তাঁকে ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

    তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে শনিবার উত্তপ্ত হয়েছিল ক্যাম্পাস। রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছিল। হাসপাতালে উপাচার্যকে হেনস্থা, রাতে ক্যাম্পাসে তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে আগুনের ঘটনায় উত্তেজনা ছিল। সেই আবহেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুরু হয় পড়ুয়াদের জেনারেল বডি (জিবি)-র বৈঠক। রাত পর্যন্ত চলে সেই বৈঠক। রাতভর উত্তেজনা থাকলেও রবিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে।

    শনিবার ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁকে ঘিরে ‘গোব্যাক’ স্লোগানও দেন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফের সদস্যেরা। অশান্তির সূত্রপাত। দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হল বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যাদবপুরে। ব্রাত্যের গাড়ির টায়ার পাংচার করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির পাশাপাশি তাঁর পাইলট কারেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। আহত হন ব্রাত্য। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের পাল্টা অভিযোগ, মন্ত্রীর গাড়ি এক ছাত্রকে চাপা দিয়েছে। তিনি আহত হয়েছেন। পড়ুয়াদের দাবি, ওই ছাত্র যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সহপাঠীদের। যদিও হাসপাতালের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

    বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ওয়েবকুপার সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেও জড়ান বিক্ষোভকারীরা। অভিযোগ, তাতে আহত হন এক পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে তাড়া করার অভিযোগ ওঠে। তাঁকে রক্ষা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই উত্তেজনা সীমিত থাকেনি। সময় যত গড়িয়েছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ ততই চড়েছে। থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে এসএফআই। পাল্টা শনিবার সন্ধ্যায় সুকান্ত সেতু থেকে মিছিল শুরু করে তৃণমূল। যাদবপুরে মুখোমুখি হয় দুই পক্ষ। তাতে বৃদ্ধি পায় উত্তেজনা। যদিও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর গাড়িতে ভাঙচুরে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে থানায় অবস্থান শুরু করে তৃণমূল।

    রাতেও উত্তেজনা ছড়ায় ক্যাম্পাসে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আচমকা আগুন লাগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। জানা গিয়েছে, তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে হঠাৎ করেই আগুন লাগে। কী ভাবে আগুন লাগল তা এখনও জানা যায়নি। অন্য দিকে, রাতে আহতদের দেখতে কেপিসি হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্ত হন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে কয়েক জন হেনস্থা করেন। তাঁর পাঞ্জাবিও টানাটানিতে ছেঁড়া হয়েছে।

    তৃণমূলের পাশাপাশি শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনও। আগামী সোমবার রাজ্যের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই। যদিও তারা জানিয়েছে, তাদের ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষায় কোনও সমস্যার সৃষ্টি হবে না।রবিবারও পথে থাকছে তারা। বিকেলে সুকান্ত সেতু থেকে প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনের। এসএফআই সূত্রে খবর, পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করতে সোমবারের কর্মসূচির পর আবার জিবি বৈঠক হবে। তবে, তৃণমূলের তরফে এখনও পর্যন্ত রবিবার যাদবপুরের ঘটনায় কোনও কর্মসূচির কথা জানানো হয়নি।

    যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে এ বার সরব হল ‘অভয়া মঞ্চ’ও। ওই সংগঠন পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনার নিন্দা করেছে। সংগঠনের আহ্বায়ক মণীষা আদক, তমোনাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা কখনও এমন এক বিদ্বেষপূর্ণ ও অপরাধমুলক ঘটনা অতীতে দেখিনি যা শনিবার যাদবপুরে ঘটেছে।’’ ব্রাত্যকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে প্রতিবাদরত ছাত্রদের উপর গাড়ি চালিয়ে দিয়েছেন। এই নিন্দনীয় হামলাই প্রতিবাদের আগুন তীব্রতর করেছে।’’ রবিবারও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গাড়ি তলায় পড়ে যাওয়ার পড়েও কেন কোনও ফ্র্যাকচার হল না?’’ তাঁর দাবি, হামলার ঘটনার থেকে মুখ ঘোরাতেই ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলা হচ্ছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)