আয়ুষ্মান ভারতে ১২ হাজার কোটি দেয়নি কেন্দ্র, চিকিৎসার পরও মেলেনি টাকা, মাথায় হাত হাসপাতালগুলির
বর্তমান | ০৩ মার্চ ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: নরেন্দ্র মোদির সাধের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কত মানুষ দেশজুড়ে সুবিধা পেয়েছে, তার প্রচার গত কয়েকটা ভোটে নিরন্তর চলছে। কিন্তু এই প্রকল্পে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পর হাসপাতালগুলির কী অবস্থা? সেটা কিন্তু কখনও প্রচারে আসে না। এবার তথ্য জানার অধিকার আইনে যে অঙ্কটা পাওয়া গেল, তা চোখ কপালে তোলার জন্য যথেষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারই জানাচ্ছে, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনায় (পিএমজেএওয়াই বা ভক্তদের ভাষায় ‘মোদিকেয়ার’) নথিভুক্ত হাসপাতালগুলিকে ১২ হাজার কোটি টাকার উপর বকেয়া মেটানো হয়নি। আনসেটলড ক্লেইমের সংখ্যা প্রায় ৬৪ লক্ষ। অর্থাৎ, চিকিৎসা পরিষেবা দিলেও কেন্দ্রের থেকে টাকা পায়নি হাসপাতালগুলি।
জনৈক অজয় বাসুদেব বোস ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে নথিভুক্ত হাসপাতালগুলির কত টাকা বকেয়া আছে? ঠিক এক মাস পর, ২৮ ফেব্রুয়ারি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি উত্তর দিয়েছে। পিএমজেএওয়াই-এর মুখ্য তথ্য আধিকারিক অঙ্কিত কুমার জানিয়েছেন, বকেয়া ক্লেইমের পরিমাণ ৬৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫১৭টি। আর সেই বাবদ হাসপাতালগুলির প্রাপ্য ১,২১,৬১,৪৫,৬৩,৬১৭ টাকা। অর্থটা জলের মতো পরিষ্কার। কর্মসংস্থানের দিক থেকে গোটা বিশ্বে প্রথম সারিতে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রকেই বিপাকে ফেলে রেখেছে মোদি সরকার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ুষ্মান ভারত শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে চিকিৎসা পেয়েছেন ৮ কোটি ৫৯ লক্ষ মানুষ। কিন্তু, কেন্দ্রের পোর্টালে এই কথা লেখা নেই যে, তাদের মতো কত মানুষের চিকিৎসার খরচই মেটায়নি সরকার! ইউনাইটেড ডক্টরস ফ্রন্টের সর্বভারতীয় সভাপতি ডাঃ লক্ষ্য মিত্তল বলেন, ‘ফাঁকা বুলি দিলে হবে? এই বিপুল টাকা বাকি রেখে দেওয়ায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন, হাসপাতালের ওষুধ-যন্ত্রপাতি কেনার খরচ, সবই আটকে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়বে রোগী পরিষেবায়। অবিলম্বে এই টাকা মেটানোর দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত চালু করা হয়নি বলে কথায় কথায় ঠেস দিতে ছাড়েন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এ রাজ্যে ২০১৭ সালে চালু হয় মমতার স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী। অথচ এখানে কিন্তু এত কোটি টাকা ফেলে রাখার মতো সমস্যা তৈরি হয়নি। ছোট ও মাঝারি ১৭০০ প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘অধিকাংশ সময় এক মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যসাথীর ক্লেইমের টাকা সেটল হয়ে যায়।’ পূর্ব ভারতের বড় হাসপাতাল-নার্সিংহোমের সংগঠনের শীর্ষকতা রূপক বড়ুয়ার বক্তব্য, ‘এখন এক-দেড় মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যসাথীর টাকা পেয়ে যাচ্ছি আমরা।’ রাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ভিন রাজ্যের রোগীদের চিকিৎসায় আয়ুষ্মান ভারত চালু করেছে। অভিজ্ঞতা তাদের কেমন? বাইপাসের এমনই এক হাসপাতালের পদস্থ কর্তা বলেন, ‘কমপক্ষে তিন থেকে ছ’মাসের আগে ক্লেইম মেটায় না ওরা। তাও বারবার মনে করাতে হয়।’