• ‘দেড় ঘণ্টা ধরে দু’জনের শিরা কেটেছিলাম’,  তদন্তকারীদের জেরায় স্বীকারোক্তি প্রসূনের
    বর্তমান | ০৩ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্ত্রী রোমি ও বৌদি সুদেষ্ণাকে শিরা কেটে খুন করার কথা জেরায় আগেই স্বীকার করেছেন দে পরিবারের ছোট ছেলে প্রসূন। এই কাজের জন্য কতটা সময় নিয়েছিলেন তিনি? তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, পেশাদার অপরাধী না হওয়ায় ওই কাজ করার সময় নিশ্চয়ই একটু হলেও হাত কেঁপেছে প্রসূনের। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এ সংক্রান্ত রহস্য পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তরে ট্যাংরার ওই ব্যবসায়ী পরিবারের ছোট ছেলে জানিয়েছেন, মনকে শক্ত করে দু’জনের শিরা কেটেছেন তিনি। অপটু হাতে ওই কাজ করায় ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত তাঁর জামাকাপড় সহ গোটা ঘরেই ছড়িয়ে পড়ে। 


    ট্যাংরার বাড়িতে তিনটি ‘বডি’ পড়ে থাকার খবর পেয়ে অফিসাররা সেখানে পৌঁছে দেখেছিলেন, রক্তে ঘরের মেঝে ভেসে গিয়েছে। বিছানার চাদরও রক্তে ভর্তি। দুই বধূর হাতের শিরা কাটা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরই তদন্তকারীরা বুঝে গিয়েছিলেন, দে পরিবারের দুই গৃহবধূকে খুন করা হয়েছে। প্রথমে কয়েকদিন নানাভাবে বিভ্রান্ত করার পর অবশেষে প্রসূন পুলিসের কাছে মেনে নেন যে তিনিই খুন করেছেন স্ত্রী ও বৌদিকে। সেই সঙ্গে পুলিসকে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সহজে হয়নি! প্রথমে ঠিক হয়েছিল, তাঁরা দু’জন হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করবেন। তখন প্রশ্ন ওঠে, এভাবে আত্মহত্যা করতে তাঁরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে কী হবে? কীভাবে আত্মহত্যা নিশ্চিত করা যাবে, তা ঠিক করতে বিভিন্ন বইপত্র ও গুগলে খোঁজ চালানো হয়। মানবদেহের কোন শিরা কাটলে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়, তা খোঁজ করতে গিয়ে প্রসূন জানতে পারেন, ঘাড় ও গলার কাছে থাকা শিরা কাটলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু নিশ্চিত। হাতের শিরা কাটলেও একই ফল হবে। তদন্তকারীদের আরও সন্দেহ, এই বিষয়ে কোনও ভিডিও বা মুভিও দেখে থাকতে পারেন দে বাড়ির ছোট ছেলে। মোবাইলের ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলে জানা যাবে, শিরা কাটা নিয়ে জানতে কোন কোন সাইটে সার্চ করা হয়েছিল। 


    তদন্তকারীদের কাছে প্রসূন দাবি করেছেন, জীবনে কোনওদিন তিনি ছুরি- কাঁচি চালাননি। তাই বৌদি ও স্ত্রীর শিরা আদৌ কাটতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রথমে দোটানায় ছিলেন। কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছিলেন, যত কঠিনই হোক, এই কাজটা তাঁকে করতেই হবে। আর কোনও উপায় নেই তাঁদের। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর কাগজ কাটার ছুরি নিয়ে বারবার ‘শ্যাডো’ করেন বাড়িতে। প্রসূনের কথায়, স্ত্রী ও বৌদি হাতের শিরা কাটতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে শক্ত হয়েই তাঁদের ঘরে ঢুকেছিলেন। চোয়াল শক্ত করে ছুরি দিয়ে ঘষেঘষেই কেটেছিলেন রোমির হাতের শিরা। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরতে শুরু করে। কী হতে চলেছে বুঝতে না পেরে তাঁর গলায়ও ছুরি চালিয়েছিলেন প্রসূন। স্ত্রীর শিরা কাটতেই ৫০মিনিট চলে যায়। এরপর বৌদির শিরা কাটতে সময় নেন প্রায় ৪০ মিনিট। তবে বৌদির ক্ষেত্রে মৃত্যু নিশ্চিত ধরে নিয়ে গলায় আর ছুরি চালাননি। ‘অপারেশন’ শেষ করে দাদাকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দেড় ঘণ্টায় সব শেষ করে দিয়েছি।’  ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)