যাদবপুরে এসএফআই বিরোধী নকশাল নেতাকে আঁকড়েই বাঁচার চেষ্টা বামেদের
বর্তমান | ০৩ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দিন দশেক আগে ‘এসএফআই বর্জিত’ যাদবপুর ক্যাম্পাস গড়ার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্টও রয়েছে তাঁর। তাঁদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইকে ‘শালকু সরেন দাওয়াই’ দেওয়ার কথা লিখেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেওয়ালে। এহেন নকশালপন্থী (আরএসএফ) ছাত্রনেতা ইন্দ্রানুজ রায়ই এখন বামেদের ‘পোস্টার বয়’! শনিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি তাঁর উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। জখম অবস্থায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় শত্রুতা ভুলে এসএফআই সহ বামেরা ইন্দ্রানুজের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ইউনাইটেড যাদবপুর’ স্লোগান তুলছে। যা দেখে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, খড়কুটো ধরে ভেসে থাকার চেষ্টা কি একেই বলে? হাসপাতালে ইন্দ্রানুজকে দেখতে গিয়ে এই প্রশ্নে সিলমোহর দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে’র বক্তব্য, ‘এটাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই। যে ইন্দ্রানুজ এসএফআই বর্জিত ক্যাম্পাস চাইছিল, তার উপর দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাড়ি চালিয়েছেন বলে আজ আমরাই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে নেমেছি। তাছাড়া, শুধু ইন্দ্রানুজ নন, এসএফআই নেতা অভিনব বসুও তো জখম হয়েছেন।’ এসএফআইয়ের অভিযোগ, শনিবার ক্যাম্পাস দখল করতে এসেছিল তৃণমূল। অভিনব, ইন্দ্রানুজ, রাসেল সহ পড়ুয়ারা সম্মিলিতভাবে তা আটকে দিয়েছে। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসএফআইয়ের বিস্ময়কর দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি তারা ভাঙেনি। তৃণমূলের লোকেরাই ভেঙেছে। ব্রাত্য বসুর পদত্যাগের পাশাপাশি গ্রেপ্তারিও দাবি করে তারা। উল্টে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের প্রশ্ন, ‘কেউ নকশাল করে মানেই কি তার উপর দিয়ে গাড়ি চালানো যায়?’
আজ, সোমবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই। নেতৃত্বের দাবি, এতে পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হবে না। রবিবার বিকেলে সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিল করে বামফ্রন্ট। তৃণমূলের শনিবারের মিছিলের পাল্টা এই কর্মসূচিতে শক্তি প্রদর্শনই মূল লক্ষ্য ছিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মিছিলের শুরুতে হুইল চেয়ারে এসে যোগ দেন অভিনব বসু। ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা। তবে এদিন সকালে এসএফআই যাদবপুর এইটবি বাসস্ট্যান্ডের সামনে অবস্থানে বসলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ উগরে দেন। এসবের মধ্যে প্রাক্তন এসএফআই, বর্তমানে সিপিআই যুবনেতা সৈকত গিরি অধ্যাপকদের হেনস্তার বিরোধিতা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করলে বিতর্ক তৈরি হয় বাম শিবিরে। দলের নির্দেশে তিনি সেই পোস্ট তুলে নিলেও বিতর্ক থেকে যায়। সৈকত বলছেন, ‘ক্যাম্পাসে শালকু দাওয়াইয়ের কথা বলা বা অধ্যাপকদের গালিগালাজ কখনওই কোনও ছাত্র সংগঠনের আচরণ হতে পারে না।’
এদিকে পুলিস সূত্রে দাবি, যাদবপুর-কাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন মাওবাদী নেতা রিভু ওরফে শুদ্ধসত্য। ওয়েবকুপার অনুষ্ঠান ভেস্তে দিতে গোপনে কাজ করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে ‘ফেরার’ ওই মাওবাদী নেতা। প্রসঙ্গত, তাঁর হাওড়ার বাড়িতে গত বছর অক্টোবর মাসে এনআইএ তল্লাশি চালিয়েছিল।