শিক্ষামন্ত্রীর উপর হামলায় চিহ্নিত ২৭, আরও দুটি মামলা দায়ের করল পুলিস
বর্তমান | ০৩ মার্চ ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সভায় খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর হামলা ও তাঁর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ছ’টি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামল লালবাজার। কারা কারা মন্ত্রীর গাড়িতে ভাঙচুর চালালেন? তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া নাকি প্রাক্তনী? কেউ কি বহিরাগত ছিলেন? সবদিকটাই পুলিসি স্ক্যানারে আনছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা। ঘটনার ভিড়ের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর ঘড়ি, অন্যান্য পড়ুয়া, শিক্ষকদের সোনার গয়না ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। সেখানেই প্রশ্ন, হামলা চালানোর সময় ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত কারা?
ইতিমধ্যেই ঘটনার সময়ের ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। হামলাকারীদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত ২৭ জনকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে বলে লালবাজারের বিশেষ সূত্রে খবর। তার মধ্যে একজনকে শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার করেছিল যাদবপুর থানা। ধৃতের নাম মহম্মদ শাহিল আলি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তনী। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজকুমার ভার্মা বলেন, যাদবপুরের হামলার ঘটনায় কেস ও পাল্টা কেস মিলিয়ে রবিবার আরও দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট সাতটি মামলা হল যাদবপুর থানায়। তার মধ্যে পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত দুটি কেস রুজু করেছে।
শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে ইট, বোতল, জুতো ছুড়তে শুরু করে বাম ও অতিবাম সমর্থিত ছাত্র ও প্রাক্তনীরা। আক্রান্ত হন ব্রাত্য বসু। তাঁর গাড়ির চালকও আংশিক জখম হন। হামলাকারীদের নাগাল থেকে বেরনোর সময়ে এক ছাত্র মন্ত্রীর গাড়ির বনেটের উপর চড়ে বসেন। গাড়ি চলতে শুরু করলেও তিনি সেখানে বসেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলন্ত গাড়ির বনেট থেকে পড়ে যান চালক। বাম সমর্থিত ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, মন্ত্রীর গাড়ি ওই ছাত্রের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ বেআইনি গাড়ি চড়ছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই গাড়িতেই ছাত্রদের পিষে মারবার চেষ্টা করছেন।
শনিবারই বিকেলে যাদবপুর থানার তরফে মন্ত্রীকে আটকানো ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, সেই ঘটনায় চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া শেষ হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটবেন তদন্তকারীরা। ওয়েবকুপার তরফে মণিকান্ত পড়্যার অভিযোগ, হামলাকারীরা এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি করেছেন। একইসঙ্গে, শিক্ষামন্ত্রীর ঘড়িও ছিনতাই করা হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাধনা খাওয়াশ নামে এক মহিলা থানায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, চার-পাঁচজন বিক্ষোভকারী ভিড়ের মধ্যে তাঁর সোনার চেন ছিনতাই করে চম্পট দিয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসে অনুপ্রবেশ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাতেও অভিযোগ জমা পড়ে। সবক’টি ক্ষেত্রেই পৃথক মামলা রুজু করেছে পুলিস। রবিবার হামলাকারীদের তরফে অভিযোগ, মন্ত্রীর গাড়ি চালছিল বেপরোয়াভাবে। তার ভিত্তিতে ষষ্ঠ কেস রুজু হয়েছে। সাধারণ মানুষের রাস্তা অবরোধের জেরে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিসের তরফে এদিন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ওরা হুলিগানিজম চাইছিল। প্ররোচনা দিয়ে অধ্যাপকদের হেনস্তা করাই উদ্দেশ্য ছিল। ছাত্ররা অধ্যাপকদের মারছে, এটা অত্যন্ত দুঃখের। দপ্তরের তরফে উপাচার্যের কাছে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আমার গাড়িতে যে ছাত্র আহত হয়েছে, তা অবশ্যই দুখের। আমি ওর পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।