• ৪৫ বছর পরে ইউনিভার্সিটি ব্লু সম্মানে অভিভূত অনিরুদ্ধ
    এই সময় | ০৩ মার্চ ২০২৫
  • সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর

    আক্ষেপ মিটতে সময় লাগল কি না ৪৫ বছর! স্কুলে পড়ার সময়ে চুটিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। জেলাস্তর তো বটেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতাতেও। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। অনিরুদ্ধ তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু তাঁর খেলার জগতে বাধা হয়ে ওঠেন বাবা–মায়ের নির্দেশ। আগে পড়া পরে খেলা— এই ছিল তাঁদের নির্দেশ।

    তাই জাতীয় প্রতিযোগিতায় আর অংশ নেওয়া হয়নি উদীয়মান প্রতিভা অনুরুদ্ধর। জীবনের একটা পর্যায় পযন্ত এর জন্য আক্ষেপও কম ছিল না তাঁর। তবে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা তাঁর সব আক্ষেপ মুছে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কল্যাণীর বিধানচন্দ্র রায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনিরুদ্ধকে ‘ইউনিভার্সিটি ব্লু ইন ব্যাডমিন্টন’ খেতাবে সম্মানিত করল। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে।

    মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে বাসিন্দা অনিরুদ্ধ স্নাতক হন বিধানচন্দ্র রায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ব্যাডমিন্টনে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব শুধু করেননি হয়েছিলেন ক্যাপ্টেনও। তবে তার আগে ১৯৭৬ সালে মুর্শিদাবাদে জেলা ব্যাডমিন্টনে একসঙ্গে জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা পেয়েছি‍লেন তিনি। তাঁর এই রেকর্ড আজও অক্ষত। খেলার পাশাপাশি মেধাবী ছাত্র হিসেবেও পরিচিতি ছিল অনিরুদ্ধর। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরনোর এত বছর পরেও তাঁকে নিয়ে চর্চা হয় সেখানে। পরে কর্মসূত্রে তিনি চলে আসেন দুর্গাপুরে। যোগ দেন প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আধিকারিক হিসেবে। পরে পাকাপাকি ভাবে দুর্গাপুরই হয়ে ওঠে তাঁর ঠিকানা।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান ‘ব্লু’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা খেলোয়াড়কেই এই সম্মান জানানো হয়। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই পুরস্কারের চল শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিধানচন্দ্র রায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শেষে ভাইস চ্যান্সেলর অশোক পাত্র সম্মান স্মারক তুলে দেন অনিরুদ্ধর হাতে। আবেগতাড়িত অনিরুদ্ধ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়েছে সেই কবে। এত দিন পরে এক জন প্রাক্তনীকে সম্মান জানানো হবে বলে কখনও ভাবিনি।’ বাবা–মায়ের নির্দেশ নিয়ে তাঁর কথায় ঝরে পড়ে আক্ষেপ। বলেন, ‘জাতীয় স্তরের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারিনি। সেই আক্ষেপ তো ছিলই। অংশ নিতে পারলে হয়তো ভালো কিছুই হতো। এমনকী ব্যাডমিন্টনের জন্যে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে চাকরিও পেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ির নির্দেশ ছিল, আগে পড়াশোনা করে শিক্ষিত হতে হবে। তাই চাকরি না করে পড়াশোনা করেছি। তবে এই সম্মানের পরে আজ আর কোনও আক্ষেপ নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)