সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
কৃষির উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিতে পারে হুল-হীন মৌমাছি—এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় এর হদিশ মিলেছে। এই মৌমাছি পালনের মাধ্যমে দু’টি পথ দিয়ে আয় বাড়াতে পারবেন কৃষকরা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হুল-হীন মৌমাছিও চাক বাঁধে। মধু তৈরি করে। যে মধুর স্বাদ একটু অম্ল হলেও ওষধি গুণ বেশি। পাশাপাশি এই মৌমাছি ছোট্ট ফুলেও পরাগ মিলন ঘটাতে সক্ষম। তিল, সর্ষে, বেগুন, টম্যাটো থেকে শুরু করে উচ্ছে, তরমুজের ফলনও বাড়াতে পারে এই মৌমাছি।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটানি ও ফরেস্ট্রি বিভাগের গবেষক প্রকাশ কর্মকার, উজ্জ্বল লায়েক, সৌরভ বিশুই, অরিজিৎ কুণ্ডু, রাজীব মণ্ডল ও নন্দিতা দাস তিন ভাগে এই গবেষণা করেন। একদিকে যেমন হুল-হীন মৌমাছির মধু উৎপাদন ও চরিত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। তেমনই ফলন বৃদ্ধিতে এই মৌমাছির ভূমিকা কী, তা নিয়েও এরা গবেষণা করেন। একটি উচ্ছে খেতে হুল–হীন মৌমাছির ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে ফলন বেড়েছে। তরমুজের খেতেও এই গবেষণা চলেছে। এই গবেষণা বিভিন্ন বিদেশি জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক প্রকাশ কর্মকার জানান, হুল-হীন মৌমাছি গাছের কোটরে, দেওয়ালের ফাটলে চাক তৈরি করে। ফলে বাইরে থেকে তা বোঝা যায় না। কিন্তু সহজেই এগুলি চাষ করা যায়। তার জন্য খরচও বেশি নয়। একটি ১২ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চির বাক্সে ৪-৫ হাজার মৌমাছি থাকতে পারে। এগুলি দীর্ঘদিন বাঁচে। এরা খাবার সংগ্রহের পাশাপাশি কলোনিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও রাখে। আর ফুলে ফুলে ঘুরে সারা বছর ধরে মকরন্দ (নেকটার) ও পরাগ রেণু (পোলেন গ্রেন) সংগ্রহ করে। মকরন্দ থেকে মধু তৈরি করে। এরা বাসস্থান থেকে ৮০০ মিটার ব্যাসার্ধে ঘুরে বেড়াতে পারে। ইউক্যালিপটাস, সর্ষে, ধনে, মৌরি, তিল, কালোজিরে, লেবু, সজনে ফুল, লিচু, গুলমোহর, কুমড়ো, বেগুন, টম্যাটো, তরমুজ, উচ্ছে, থেকে কৃষ্ণচুড়া, রাধাচূড়া থেকেও মধু সংগ্রহ করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে চাষ করার থেকে হুল-হীন মৌমাছি ব্যবহার করে চাষ করলে উচ্ছে ও তরমুজের সাইজ লম্বায় যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চওড়াতে। ফলে বাড়ছে ওজনও। সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করলে যেখানে একটি উচ্ছের ওজন ২৫.৯০ গ্রাম হচ্ছে সেখানে হুল-হীন মৌমাছির কারণে ওজন বেড়ে হচ্ছে ৩০.৯১ গ্রাম। একই ভাবে তরমুজের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একটি ৩.০১ কেজির তরমুজের ওজন বেড়ে ৩.৩৬ কেজি হচ্ছে। একদিকে ফলন বৃদ্ধি অন্য দিকে, মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ— দু’দিকেই লাভবান হবেন চাষিরা। অধ্যাপক প্রকাশ কর্মকারের কথায়, ‘হুল-হীন মৌমাছির তৈরি মধুর দামও বেশি। কারণ, এর ওষধি গুণ বেশি। কৃষকরা মধু উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষিতেও বেশি ফলন পাবেন। দু’দিকেই লাভবান হবেন।’