এই সময়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের উত্তেজনার আঁচ পোহাচ্ছে বঙ্গ–রাজনীতিও। শনিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতেই রক্তাক্ত হয়েছিল ক্যাম্পাস। এমনকী, বিক্ষোভকারী পড়য়াদের ধাক্কাধাক্কি এড়াতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রীও। রবিবার দিনভর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলল রাজনৈতিক দড়ি টানটানি।
‘শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির তলায় ছাত্র’– এই স্লোগানকে সম্বল করে এ দিন রাজ্যজুড়ে পথে নামে এসএফআই–সহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। ‘শিক্ষাঙ্গনে কেন বারবার আক্রান্ত হতে হচ্ছে শিক্ষকদের?’
পাল্টা এই প্রশ্ন তুলে বামেদের বিঁধতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। তবে এই রাজনৈতিক যুদ্ধে সব থেকে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি! কারণ, যাদবপুরের ঘটনায় যুযুধান দু’পক্ষই বিজেপি বিরোধী। ফলে বিজেপি এ ক্ষেত্রে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে। যাতে তাদের অবস্থান থেকে কোনও পক্ষেরই সুবিধা না হয়।
শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় জখম হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়। এই ঘটনায় প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ মিছিল বার করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। পথে নামেন মহম্মদ সেলিম, সূজন চক্রবর্তীর মতো বর্ষীয়ান সিপিএম নেতারাও।
এ দিন তাঁরা সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত মিছিল করেন। সেখান থেকে ব্রাত্য বসুর গ্রেপ্তারির দাবিও তোলা হয়। যার জবাব দিতে গিয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘ওরা (সিপিএম) তো মাঝে মধ্যে আমাদের অনেকেরই গ্রেপ্তারির দাবি তোলে। আমরা কেউ গ্রেপ্তার হলে ওরা কি শূন্য থেকে এক হবে! হাওয়া কিন্ত তা বলছে না। হাওয়া অনেক বদলে গিয়েছে।’
যাদবপুরের ঘটনার জবাব দিতে বিধানসভায় বামেদের শূন্য আসনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘সিপিএম শূন্য হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তবুও অসভ্যতামো বন্ধ হয়নি।’ কল্যাণের সংযোজন, ‘বেশ কিছু বছর ধরে দেখছি, বাম এবং অতিবামরা পরিকল্পিত ভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করছে। এরাই আরজি করের ঘটনায় ধুন্ধমার বাঁধিয়েছিল। সিপিএমের কাছ থেকে অবশ্য এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না।’ রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা নিজের এক্স হ্যান্ডলে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই–কে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে লেখেন, ‘এসএফআই গুণ্ডারা দিনদুপুরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর উপরে হামলা করেছে। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তা হলে একবার ভেবে দেখুন, সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে তারা কী করে!’
সিপিএম অবশ্য জোর দিতে চাইছে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির তলায় পড়ে ছাত্রর জখম হওয়ার ঘটনাকে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বিস্ময় প্রকাশ করে ব্রাত্যর উদ্দেশে বলেন, ‘পড়ুয়াদের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। আপনি আন্দোলনকারী ছাত্রের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিলেন! নির্মম না হলে এ কাজ কেউ করতে পারেন! এই নির্মমতার নামই তৃণমূল।’
তৃণমূল বনাম বামের এই লড়াইয়ের মাঝখানে মহা ফাঁপড়ে পড়েছে বিজেপি। তারা তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীকেও সমর্থন জানাতে পারছে না, আবার যাদবপুরের বাম ছাত্রকূলের পাশে দাঁড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না। অতীতে বহুবার যাদবপুরের পড়ুয়াদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপি নেতাদের। বিজেপিতে থাকাকালীন যাদবপুরে গিয়ে ঘেরাও হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
পরবর্তীতে যাদবপুরে ব়্যাগিং–এর প্রতিবাদে মিছিল করতে গিয়েও বিজেপির যুব মোর্চাকে আক্রান্ত হতে হয়। সেই মিছিলে হাজির ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। কিন্তু যাদবপুরের বর্তমান ঘটনার আবহে শুধু বাম ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিশানা করলে যে আবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো হয়ে যাবে! তাই বিজেপি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, শনিবারে যাদবপুরের ঘটনা আদপে বাম–তৃণমূল বোঝাপড়া।
রবিবার শুভেন্দুর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঘের পিঠে চেপেছেন। সেকু–মাকুদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝাপড়া আছে। তথাকথিত সেকুলার মুসলিম লিগ–২ তৃণমূল কংগ্রেস এবং স্বাধীনতা দিবস পালন না করা মাকুদের আমরাই উপড়ে ফেলব। ভোট এলেই দেখবেন, যাদবপুরের এই আন্দোলনকারীরা নো ভোট টু বিজেপির ডাক দিয়ে তৃণমূলের সুবিধা করে দেবে। সব গোপন বোঝাপড়া।’