• রাজ্যের শিল্পোন্নয়নই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ মার্চ ২০২৫
  • এবারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সব মিলিয়ে ২১২টি সমঝোতাপত্র এবং অভিপ্রায়পত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজ্যে এইসব শিল্প গড়ে তুলতে বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজন। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, শিল্পের প্রয়োজনে জমির সন্ধান করতে ‘পোর্টাল’ চালু করছে রাজ্য সরকার এই পোর্টালে এক ক্লিকেই জমির সব বিবরণ, তথ্যাদি সব এসে যাবে হাতের মুঠোয়। শুধু কলকাতা শহর বা শহরতলি এলাকাতেই নয়, রাজ্যের ১২৫টি পুরনিগম এবং পুরসভাতেও এই পোর্টাল কাজ করবে। এই পোর্টাল চালু করার ব্যাপারে সরকারি লাল ফিতের ফাঁস আর থাকবে না। পোর্টালে এক ক্লিকেই জমির সব বিবরণ, স্থাবর সম্পত্তির যাবতীয় তথ্যাদি পৌঁছে যাবে। সংশ্লিষ্ট মহলে। নবান্নের এই সিদ্ধান্ত এবং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্যে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। এ বিভাগের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ‘পোর্টাল’ তৈরির কাজে দপ্তরের আধিকারিকদের দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ জারি করেছেন। দপ্তরের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে ‘কমন এনকামবেন্স অ্যান্ড ডিউজ পোর্টাল।’ এই পোর্টালে ক্লিক করলেই পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের কর্তারা যেনে যাবেন, সংশ্লিষ্ট জমি নিয়ে কোনও মামলা রয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্ট জমির কতবার হাত-বদল হয়েছে। এই জমি পরিত্যক্ত জমি না-কি চাষ যোগ্য, খাজনা দেওয়া থেকে শুরু করে মামলা সব বিষয়েই নথি ভেসে উঠবে পোর্টালে।

    রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করে রাজ্যে শিল্পবান্ধব উদ্যোগের সঠিক প্রদর্শনের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর সেই বাজেট বক্তৃতায় শিল্পের প্রয়োজনে জমির সন্ধান যে অতি অবিশ্যিক সে ব্যাপারেও খোলাখুলি মন্তব্য‘ও তিনি পাঠ করেছেন। বাজেট বিবৃতিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী স্পষ্টতই জানিয়েছেন, গত বছরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (ডব্লুবিআইআইডিসি) প্রকল্পিত ৫৪.৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগে এবং প্রস্তাবিত ২৭৪ জনের কর্মসংস্থানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক-এ চারটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটের জন্য ১১.৬৩ একর জমির ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও ১৭টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটের জন্য ৪২.৬২ একর জমি সংগ্রহের কাজ চলছে। জমির আরও প্রয়োজন।’ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, জমির খোঁজে যে পোর্টাল তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকেই শিল্পের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত জমি মিলবে।

    এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘শিল্প ভবনগুলির জন্য বাড়ির নকশার অনুমোদন, সম্পত্তিকর প্রদান, ডিজিটাল মাস্টার প্ল্যান, শহরে জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, জলের সংযোগ ইত্যাদি নিয়েই ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ চালু করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই জমির হাল-হকিকত জানতে ‘পোর্টাল’ চালু করা হচ্ছে।’ ফিরহাদের কথায়, রাজ্যের এই উদ্যোগে শুধু শিল্পে লগ্নিকারীরাই নন, উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষও। বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে হলে সাধারণ মানুষও জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট জমির সর্বশেষ পরিস্থিতি। চলতি নিয়মে কোনও জমি বা বাড়ি কিনতে হলে সবিস্তার তথ্য হাতে পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের নানা আধিকারিকদের দ্বারস্থ হতে হয়। হতে হয় হয়রানি। অনেক ক্ষেত্রে জমির ব্যাপারে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ ও ওঠে। এই ‘পোর্টাল’ চালু হয়ে গেলে জমির ক্রেতা নিজেই খুঁজে নিতে পারবেন নির্দিষ্ট জমির বা বাড়ির সঠিক তথ্য।

    ‘ফিল্ড সার্ভের পাশাপাশি অন্যসব সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বা আরও করা হবে। সেইসব তথ্য একত্রিত করা হয়েছে। এই সঙ্গে শুরু করে দেওয়া হয়েছে ঘরে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জমির খাজনার বিষয়ে সব তথ্যাদি পাওয়ার ব্যবস্থাদি। জমির মৌজা, দাগ, খতিয়ান নম্বর দিলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জানা যাবে সংশ্লিষ্ট জমির খাজনা কত বাকি বা অন্যসব খুটিনাটি তথ্য। কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘শিল্পোদ্যোগীদের আর জমির খোঁজে অথবা সামান্য কাজের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না বা হচ্ছে’ও না। এইভাবেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ঘুঘুর বাসা ভেঙে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সব ব্যবস্থাটাই অনলাইনে করে দেওয়া হচ্ছে। জমির মিউটেশন, রেকর্ড ও কনভার্সনের আবেদন করার কাজ’ও হচ্ছে এই পদ্ধতির মাধ্যমেই।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)