যাদবপুর–কাণ্ডে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ৷ এই ঘটনায় যাদবপুর থানায় মোট সাতটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ সহ একাধিক অভিযোগ তুলে ৩টি এফআইআর করেছে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপা। অপরদিকে ক্যাম্পাসে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে দুটি এফআইআর করে তদন্ত শুরু করেছে। যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার বিকেলে সুলেখা মোড় থেকে মিছিল করেছে বামেরা। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব। আজ অর্থাৎ সোমবার রাজ্যের সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অভিযোগ, ব্রাত্য বসুর উপর হামলার ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে বিক্ষোভকারীরা ভিকটিম কার্ড খেলছে।
শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার একটি সম্মেলন ছিল৷ এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা৷ তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়৷ এই ঘটনায় জখম হন শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় এক পড়ুয়া জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইন্দ্রানুজ রায় নামে ওই পড়ুয়াকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। তাঁর বাঁ চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার রেশ ধরেই শনিবার রাতে যাদবপুরে ‘শিক্ষাবন্ধু’র অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মহম্মদ সাহিল আলি নামে এক প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বর্তমানে তিনি একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী৷ কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, ধৃতকে আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত৷ প্রাক্তন ছাত্র হয়েও তিনি কেন শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিলেন তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এই নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও তিনি কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত কি না তা জানতে চাইছে তদন্তকারীরা।
শনিবার যাদবপুরের এই ঘটনায় রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর৷ জখম অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা করান ব্রাত্য বসু৷ শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির সামনে পড়ে গুরুতর জখম হন এক পড়ুয়া। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবারই যাদবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বামপন্থী ছাত্ররা। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রীর উপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেসও। শনিবার রাতের দিকে আন্দোলকারীদের হাতে হেনস্থার শিকার হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। এ দিন তিনি জখম পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে কেপিসি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, ‘এই ঘটনা কীভাবে ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে, নাকি নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
শনিবার যাদবপুরের ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘গাড়ির তলায় ভয়ঙ্করভাবে পিষে যাওয়ার এক্স–রে রিপোর্টে কোনও ফ্র্যাকচার নেই।’ জখম সেই ছাত্রের এক্স–রে রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আনার দাবিও জানান তিনি। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কুণাল। তাঁর দাবি, ভিকটিম কার্ড খেলে ব্রাত্য বসুর উপর হামলার ঘটনা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রবিবার ওয়েবকুপার সংগঠনের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বার্ষিক সভা ছিল। এই বৈঠক শেষ হতেই এক বিবৃতি জারি করে যাদবপুরের ঘটনাকে ‘বর্বরোচিত’ বলে ব্যাখ্যা করেন অধ্যক্ষরা।
যাদবপুরে অশান্তির ঘটনায় জখম প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের বাবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, ‘জখম ছাত্রের বাবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি এক অর্থে আমার সহকর্মী। তাঁর সঙ্গে আলাদা করে ফোনে কথা বলতে পারি।’ এই ঘটনার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।