দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান থেকে আরামবাগ বাদ। অথচ আরামবাগকে বাদ দেওয়া মানে বন্যার হাত থেকে বাঁচানো যাবে না আরামবাগ–সহ খানাকুলকেও। তাই এ বার খানাকুলকে বাঁচাতে ময়দানে নেমে পড়েছেন ‘খানাকুল বাঁচাও কমিটি’–র লোকজন।
এই সোসাইটির পক্ষ থেকে সমগ্র খানাকুলবাসীর জোরালো দাবি, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে খানাকুলকেও যুক্ত করতে হবে। অথবা, আরামবাগ মহকুমা তথা খানাকুলের জন্য আলাদা ভাবে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত খানাকুল। এখানকার মানুষের অনেক সমস্যার মধ্যে সবথেকে বড় হলো, এই এলাকার বন্যা। বর্ষার সময় দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণের ত্রিফলা আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় সমগ্র এলাকা। সম্প্রতি রাজ্য বাজেটে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান রূপায়ণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় আশঙ্কার কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে। কারণ, এই প্রকল্পে খানাকুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এমনকী, যে রূপনারায়ণ নদ শিলাবতী, দারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী–সহ বিভিন্ন নদীর প্রবাহিত জলরাশি আজীবন একাই বহন করে চলেছে, তার ড্রেজিং বা পলি অপসারণের কথা ভাবাই হয়নি। এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
খানাকুলকে সরিয়ে রেখে উক্ত প্ল্যান বাস্তবায়িত করা হলে খানাকুলের মানুষের দুর্ভোগ যে চরমে পৌঁছবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই খানাকুলের মানুষের দাবি, দ্রুত খানাকুলের জন্য অথবা আরামবাগের জন্য পৃথক মাস্টারপ্ল্যান করা হোক। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় খানাকুলে। বন্যার সময়ে খানাকুল সমগ্র রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অবস্থান করে।
বিগত বন্যায় দেখা গিয়েছে, হাওড়া জেলাকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে ডিভিসির ছাড়া বিপুল জলরাশির অধিকাংশই (প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ) দামোদর দিয়ে না পাঠিয়ে মুণ্ডেশ্বরী নদী দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার নিম্নচাপের কারণে দ্বারকেশ্বর অববাহিকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হলে এই নদীতে কোনও বাঁধ বা জলাধার না থাকায়, তার অনিয়ন্ত্রিত জল বহন করার ক্ষমতা নদীর থাকে না। ফলে, উপচে পড়া জলে খানাকুল ও আরামবাগ এলাকা বন্যায় ভেসে যায়।
আর এই সব নদীর নিকাশি হিসেবে কাজ করে রূপনারায়ণ। সে জন্যই রূপনারায়ণকে উক্ত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘাটাল মাস্টার প্রকল্পে নাকি রূপনায়ণকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে খানাকুল বাঁচাও সোসাইটির পক্ষ থেকে অমিত আঢ্য জানান, বন্যার হাত থেকে বাঁচতে হলে খানাকুল মাস্টারপ্ল্যান খুবই প্রয়োজন। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত পদক্ষেপ করা। রাজনৈতিক জন প্রতিনিধিদেরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
জগৎপুরের একেবারে প্লাবিত এলাকার সৌমেন দোলুই বলেন, ‘আমাদের বসবাস একেবারে রূপনারায়ণের তীরবর্তী এলাকায়। আমরা জানি, বন্যার সময়ে কত কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। তাই, খানাকুল বিধানসভার মানুষকে বাঁচতে হলে আলাদা মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন।’
আলাদা মাস্টারপ্ল্যান যদি না–ও করা সম্ভব হয়, খানাকুলের মানুষের দাবি, আরামবাগ মহকুমাকে অবশ্যই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। না হলে আরামবাগকে কোনও দিনই বন্যার হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।