এই সময়: আগামী বিধানসভা ভোটে জিততে আরএসএসের সঙ্গ আরও নিবিড় ভাবে চাইছে বিজেপি। তবে আরএসএস মনে করছে, ভোটে জেতার জন্য বিজেপির সর্বস্তরের নেতা–কর্মীদের মধ্যে মতাদর্শগত ভিত মজবুত করা প্রয়োজন সবার আগে। রবিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় সঙ্ঘ পরিবারের সমন্বয় বৈঠকের শেষ দিন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) নেতারা এই বার্তাই ঠারেঠোরে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে।
অর্থাৎ, আদর্শের ভিত শক্তপোক্ত না হলে তামাম গেরুয়া শিবিরের একসুরে বাজা যে কঠিন, সেটাই বঙ্গ–বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরকে বোঝাতে চেয়েছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, বিজেপি এখন সাবালক হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আরএসএসের সহযোগিতা ছাড়াও যে বিজেপি ভোটে জিততে পারে, ঘুরিয়ে সে বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। নাড্ডার সেই মন্তব্য নিয়ে গেরুয়া শিবিরে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছিল।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর অবশ্য ঢোঁক গিলেছিলেন বিজেপি সভাপতি। পরবর্তীতে আরএসএসের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় গড়েই মহারাষ্ট্র ও দিল্লির বিধানসভা ভোটে সাফল্যের মুখ দেখে বিজেপি। ২০২৬ বিধানসভা ভোটে বাংলার মসনদও একই কৌশলে দখল করতে চাইছে বিজেপি। বিশেষত আরএসএস সুপ্রিমো মোহন ভাগবত গত মাসে টানা ১০ দিন বাংলায় থাকার পর পদ্ম শিবিরে তৎপরতা আরও বেড়েছে।
কিন্তু গত দু’দিনের সমন্বয় বৈঠকে বাংলার আরএসএস নেতৃত্ব সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্যর মতো বিজেপি নেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সমন্বয় তখনই গড়ে ওঠা সম্ভব হবে, যখন বিজেপি নেতা–কর্মীরা আরএসএসের ভাবাদর্শ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবেন। সঙ্ঘের এক প্রবীণ নেতার প্রশ্ন, ‘বাংলায় বিজেপি আগের থেকে অনেক বড় হয়েছে। নেতা–কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু আদর্শের ভিত কি মজবুত হয়েছে? এ রাজ্যের ক’জন বিজেপি নেতার আরএসএস সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে?’
তাঁর সংযোজন, ‘আরএসএস রাজনৈতিক দল নয়। একটি সামাজিক সংগঠন। এটাও বহু বিজেপি কর্মী জানেন না। কারণ, তাঁরা অধিকাংশই ২০২১–এর আগে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল থেকে এসেছেন। আদর্শের ভিতই আমাদের মধ্যে শক্তপোক্ত সমন্বয়ের সেতু গড়ে তুলতে পারে।’
তবে সেটা আদৌ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সূত্রের খবর, ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে যাঁরা বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা–কর্মী ছিলেন, তাঁরা বেশিরভাগই এখন নিষ্ক্রিয়। এমনকী, আরএসএস থেকে বিজেপি করতে আসা নেতারাও অনেকে কল্কে পাচ্ছেন না পদ্মে। বহু জেলাতেই বিজেপির লাগাম এখন অন্য দল থেকে আসা নেতাদের হাতে। বিধানসভা ভোটের আর মাত্র এক বছর দেরি। এর মধ্যে সর্বস্তরের বিজেপি নেতা–কর্মীদের আরএসএসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা আদৌ ফলপ্রসূ হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।