• বিধি সরল হলেও সংস্কারের লোক নেই, বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে মিটছে না সমস্যা
    আনন্দবাজার | ০৩ মার্চ ২০২৫
  • বিধির সরলীকরণ তো হল, কিন্তু সংস্কারের কাজ করবে কে? শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি ঘিরে এই প্রশ্নই এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে!

    বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের পুর আইন সংশোধন করা হয়েছে আগেই। সেই সমস্ত বাড়িতে থাকা ভাড়াটেদের ‘বাসিন্দা শংসাপত্র’ প্রদান করেছে পুরসভা। বছর দেড়েক আগে ভেঙে পড়া, উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বিপজ্জনক বাড়ির ভাড়াটেদের হাতে সেই শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু বাসিন্দা শংসাপত্র ভাড়াটেদের হাতে তুলে দেওয়া হলেও মালিক বেপাত্তা হওয়ায় বিপজ্জনক বাড়িটির সংস্কার করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পুরসভার বাজেট অধিবেশনে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি ইলোরা সাহা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ির মালিক সংস্কারে এগিয়ে না এলে ভাড়াটেদের বাসিন্দা শংসাপত্র দিয়ে কী লাভ?’’ যদিও ইলোরার প্রশ্নের উত্তরে সমাধানের কোনও পথ দেখাতে পারেননি মেয়র।

    ২০২৩ সালের ১৬ অগস্ট রাতে ৬৫বি পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ঠিকানায় একটি বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ায় মারা যান স্বামী-স্ত্রী। আবার ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িটির কাছেই ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে আর একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ে একই পরিবারের দুই বধূর মৃত্যু হয়েছিল। প্রসঙ্গত, শতাব্দীপ্রাচীন এই সমস্ত বিপজ্জনক বাড়িতে ভাড়াটেরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের দ্বন্দ্বে বহু বাড়িতেই সংস্কারের কাজ হয় না। কেন সংস্কার হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তরে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটেদের দিকে আঙুল তোলেন। আবার ভাড়াটেদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বাড়িওয়ালাদের দোষারোপ করেন। ফলে, বিপজ্জনক বাড়িগুলি আদতে মৃত্যুকূপ হয়ে থেকে যায়। বিপদ জেনেও তাতে বসবাস করে চলেন ভাড়াটেরা। অনেক ভাড়াটের আবার বক্তব্য, সংস্কারের কাজ শুরু হলেও তাঁরা অন্যত্র যেতে চান না। কারণ, সংস্কার-পর্ব শেষ হলে আবার ওই বাড়িতে তাঁরা যে ফিরতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?

    এই সমস্যার সমাধানে পুরসভা ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক বাড়ির সংস্কারের ক্ষেত্রে নিয়মের সরলীকরণ করেছে। ১৯৮০ সালের কলকাতা পুরসভা আইনের ৪১২-এ ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করা ভাড়াটেদের বাসিন্দা শংসাপত্র প্রদান করেছে পুরসভা। যাতে বাড়ির সংস্কার-পর্ব মেটার পরে পুনরায় সেখানে এসে থাকতে পারেন তাঁরা।

    সম্প্রতি পুরসভার বাজেট অধিবেশনে ইলোরা বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। পুরসভা ভাড়াটেদের বাসিন্দা শংসাপত্র দিচ্ছে। অথচ, বাড়ির সংস্কার যাঁরা করবেন, সেই মালিকেরাই বেপাত্তা। এ বিষয়ে পুরসভা আইন প্রণয়ন করে বিপজ্জনক বাড়ি দখল করে সংস্কারের কথা ভাবতে পারে।’’ ইলোরার এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সাফ জানিয়ে দেন, বেসরকারি মালিকানাধীন কোনও বিপজ্জনক বাড়ি দখল করার অধিকার পুরসভার নেই।

    সম্প্রতি ৬৫বি পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বিপজ্জনক বাড়িটি ঘুরে দেখা গেল, চার দিক আগাছায় ভর্তি। যে কোনও মুহূর্তে পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়তে পারে। ২০২৩ সালের ১৬ অগস্টের সেই দুর্ঘটনার পরে বেশির ভাগ ভাড়াটেই অন্যত্র থাকেন। আবার পাশের ৪২ নম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের অংশত ভেঙে পড়া বিপজ্জনক বাড়িটির কাছে গিয়ে দেখা গেল, সেটির দশা ভয়াবহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃষ্টির জমা জলে মশার প্রকোপ বাড়ছে। পরিত্যক্ত বাড়িটিতে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ থাকার আশঙ্কাও রয়েছে।

    প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিপজ্জনক বাড়িগুলি নিয়ে সমস্যার সমাধান কী ভাবে হবে? মেয়রের জবাব, ‘‘কোনও বাড়ি বেশি রকম বিপজ্জনক হয়ে পড়লে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)