কী ভাবে পৌঁছতে হবে শেষ প্রান্তে, তার ইঙ্গিত দেওয়া আছে ব্রেলে। দৃষ্টিহীনেরা ব্রেলের মাধ্যমে তা পড়ে চালককে নির্দেশ দেবেন, কোন পথে চলবে গাড়ি। আর সেই নির্দেশ মেনেই গাড়ি চালাবেন চালকেরা। এ ভাবে চালিয়ে যে গাড়ি আগে দৌড় শেষ করবে, সেটিই প্রতিযোগিতায় প্রথম হবে। তবে প্রতিযোগিতায় জিতে পুরস্কার অবশ্য পাবেন সেই দৃষ্টিহীন প্রতিযোগী, যিনি গাড়িচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রবিবারের সকালে পার্ক স্ট্রিটে দৃষ্টিহীনদের জন্য এই ভিন্টেজ গাড়ির র্যালিতে অংশগ্রহণ করলেন ১৮ জন দৃষ্টিহীন। তাঁরা হয়তো চালকের আসনে বসে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখেননি, তবে চালকের পাশে বসে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেই কাজটিও খুব সহজ ছিল না।
দৃষ্টিহীনদের জন্য এই ভিন্টেজ গাড়ির র্যালিতে দ্বিতীয় হয়েছে কিশোরী তিয়াসা বসু। তিয়াসার মা তৃষা সাহা বলেন, ‘‘ওদের এই র্যালিটা শুরু হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলের কাছ থেকে। শেষ হয়েছে পার্ক স্ট্রিটেই। এর মধ্যে ওকে শহরের ছ’টি জায়গা ছুঁয়ে যেতে হয়েছে— ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মহাকরণ, জিপিও, সেন্ট লরেন্স স্কুল, বালিগঞ্জের বিড়লা মন্দির এবং সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজ। তবে এই জায়গাগুলির নাম সরাসরি ব্রেলে লেখা ছিল না, তার ইঙ্গিত দেওয়া ছিল। আমার মেয়ে প্রতিটা জায়গার নির্দেশ চালককে সাবলীল ভাবে দিতে পেরেছে। এ রকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে ও খুব খুশি।’’ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা তিয়াসা একটি বিশেষ স্কুলের পাশাপাশি পড়ে সাধারণ স্কুলেও।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার জগদীশপুরের ছাত্রী অহনা চক্রবর্তী। সে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। অহনা বলে, ‘‘জায়গাগুলির নাম সরাসরি লেখা ছিল না। তবে তাদের ইতিহাসের কিছু টুকরো কথা লেখা ছিল। যেমন, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের কথা বলতে গিয়ে সেটির বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্য ব্রেলে লেখা ছিল। যেমন, ওই বাড়িটি কত সালে তৈরি হয়েছে, কী কারণে তৈরি করা হয়েছিল, কারা, কোথায় তৈরি করেছে ইত্যাদি। এই সব তথ্য ব্রেলে পড়ে আমায় বুঝতে হয়েছে যে, আমায় রাইটার্স বিল্ডিংয়ে যেতে হবে। আমি যদি সেটা বুঝতেই না পারি, তা হলে কিন্তু গাড়ি নিয়ে সেখানে যেতে পারব না। যেমন, সেন্ট লরেন্স স্কুলের ইতিহাস আমার খুব ভাল জানা ছিল না। তাই প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না যে, আমাকে ওই স্কুলে যেতে হবে। পরে বুঝে গিয়ে চালককে সেন্ট লরেন্স স্কুলে যেতে নির্দেশ দিই।’’
এই প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এই ভিন্টেজ গাড়ির র্যালিতে অংশগ্রহণকারী ১৮ জনের মধ্যে কয়েক জন ছিল, যারা এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। ব্রেলের মাধ্যমে ম্যাপ দেখে, প্রতিটি জায়গার ইতিহাস পড়ে, এই প্রতিযোগিতা শেষ করেছে প্রত্যেকেই। সবাইকে অভিনন্দন। এমন ধরনের প্রতিযোগিতা ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।’’