গ্রিড বিপর্যয়ের মতো বড় ধরনের বিপত্তির ক্ষেত্রে মেট্রোর সুড়ঙ্গে কোথাও ট্রেন আটকে পড়লে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি থেকে বিদ্যুতের জোগান দিয়ে ওই রেক নিকটবর্তী স্টেশনে টেনে আনার ব্যবস্থা চালু করতে চলেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বহু কোটি টাকা খরচ করে ওই ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (বি ই এস এস) বসানো হচ্ছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। লিথিয়াম আয়ন ফসফেট ব্যাটারি থেকে পাওয়া বিদ্যুৎকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইনভার্টারের মাধ্যমে পরিবর্তিত করে মেট্রোর থার্ড রেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে ওই ব্যবস্থায়। ওই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ট্রেনকে স্টেশনে টেনে আনা সম্ভব, বলে মেট্রো কর্তাদের দাবি। ভারতের মধ্যে ওই ব্যবস্থা কলকাতা মেট্রোয় প্রথম চালু করা হচ্ছে বলে কর্তারা দাবি করলেও কলকাতা মেট্রোর প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্তাদের একাংশ ওই খাতে বিপুল খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাইওয়ানের একটি সংস্থার কাছ থেকে আগামী মার্চের মধ্যে ব্যাটারি আনা ছাড়াও ওই সংস্থার দেশীয় অংশীদারের কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভার্টার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে বলে খবর। আগামী মে মাসের মধ্যে ওই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। ইনভার্টার এবং অ্যাডভান্স কেমিস্ট্রি সেলের সমন্বয়ে (আধুনিক রাসায়নিক কোষ) তৈরি ওই ব্যাবস্থার আওতায় কলকাতা মেট্রোয় ১ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের জোগান দিতে সমর্থ এমন সাতটি ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বসানো হবে বলে খবর। পুরো প্রকল্পে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
মেট্রোর প্রাক্তন এবং বর্তমান আধিকারিকদের একাংশের মতে, শেষ বার সারা দেশে গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল ২০১২ সালের ৩০ জুলাই। তার আগে উত্তর ভারতে ২০০১ সালে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। শেষ বার গ্রিড বিপর্যয়ের সময়ে সি ই এস সি তাদের বজবজ কেন্দ্রকে গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে কলকাতা মেট্রোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ অক্ষুণ্ন রেখেছিল। যার ফলে বড় বিপত্তি ঘটেনি। মেট্রো আধিকারিকদের দাবি, এখন প্রযুক্তি যে ভাবে উন্নত হয়েছে, তাতে গ্রিড বিপর্যয়ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা কার্যত নেই বললেই চলে। মেট্রোয় সাধারণ বিপর্যয়ের জেরে কোনও সাবস্টেশন বিকল হলে তারও বিকল্প ব্যবস্থা খুব দ্রুত করা যায়। পার্শ্ববর্তী সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুতের জোগান দিয়ে অনায়াসে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা যায়। ফলে বিপুল খরচ করে ওই ব্যাটারি কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
তাঁদের বক্তব্য, যদি কোনও কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎবাহী থার্ড রেলে সমস্যা দেখা দেয়, তবে সে ক্ষেত্রে ব্যাটারি ব্যবহার করেও থার্ড রেলে বিদ্যুৎ পাঠানো যাবে না। ফলে ওই যন্ত্র কেনার পরেও সমস্যার আশঙ্কা থেকেই যাবে, দাবি তাঁদের। প্রযুক্তির বিচারে দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকা অন্য একাধিক মেট্রোকে বাদ দিয়ে কলকাতা মেট্রোকেই ওই সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য কেন বেছে নেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন আধিকারিকদের একাংশ।
মেট্রো সূত্রের খবর, ওই ব্যাটারির আয়ু ১৪ বছর। দেশে শেষ বার গ্রিড বিপর্যয় ঘটেছে ১৩ বছর আগে। যে বিপত্তির আশঙ্কা নিতান্তই কম, তার জন্য এই ভাবে আগেভাগে বিপুল বিনিয়োগ করে ব্যাটারি কেনার সার্থকতা কোথায়, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আধিকারিকেরা। মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনার ক্ষেত্রে সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচল ছাড়াও সুড়ঙ্গের ছাদে বসানো এগজ়স্ট পাখা চালানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে ওই ব্যবস্থা। ব্যাটারিচালিত সরবরাহ বজায় থাকলে, মেট্রোর লাইনে বিদ্যুতের সরবরাহ কোনও অবস্থাতেই একটি নির্দিষ্ট সীমার নীচে নেমে আসবে না। উপরন্তু, অতিরিক্ত চাহিদার সময়ে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুতের জোগান দিয়ে ঘাটতি মেটানো যাবে। তাতে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।
যদিও আধিকারিকদের অন্য অংশের দাবি, বহু স্টেশনেই এখন বিপুল খরচ করে ওই সব যন্ত্র সচল রাখার জন্য জেনারেটর বসানো হচ্ছে। তা ছাড়াও, প্রযুক্তিগত ভাবে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুতের সাশ্রয় হয় না। ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য যতটা বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার কিছুটা কমই সেখান থেকে ফেরত পাওয়া যায়।