• কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্যাটারি সিস্টেম কিনছে মেট্রো, আদৌ কি এর প্রয়োজন রয়েছে?
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৩ মার্চ ২০২৫
  • কলকাতায় মেট্রোর জন্য প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে 'ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম' বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের যুক্তি, যদি কখনও গ্রিড বিপর্যয়ের মতো বড় কোনও অঘটন ঘটে, আর তার ফলে যদি সুরঙ্গের মধ্যে কোথাও কোনও ট্রেন আটকে পড়ে, তাহলে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই ব্যাটারি থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তা মেট্রোর থার্ড রেলে পাঠানো হবে। এবং তার সাহায্যে সুরঙ্গে আটকে পড়া ট্রেন নিকটবর্তী স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া যাবে।

    কিন্তু, মেট্রো কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্য আদৌ কতটা যুক্তিসঙ্গত, এবং এই বিপুল পরিমাণ খরচের সত্যিই কোনও প্রয়োজনে রয়েছে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন কলকাতা মেট্রোর বর্তমান এবং প্রাক্তন আধিকারিকদের একটা অংশ। এই প্রসঙ্গে 'আনন্দবাজার পত্রিকা'-এ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই মেট্রোর বর্তমান ও প্রাক্তন আধিকারিকদের একাংশের উত্থাপন করা প্রশ্ন ও পালটা যুক্তিগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

    সেই অনুসারে - বিইএসএস এমন একটি ব্যবস্থাপনা, যার অধীনে লিথিয়াম আয়ন ফসফেট ব্যাটারি থেকে সৃষ্টি বিদ্যুৎ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভার্টারের মাধ্যমে পরিবর্তিত করে মেট্রোর থার্ড রেলে পাঠানো হয়।

    এই ব্যবস্থাপনা কেনা হচ্ছে তাইওয়ানের একটি সংস্থার কাছ থেকে। একইসঙ্গে, ওই সংস্থার ভারতীয় অংশীদারদের কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভার্টার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে চললে আগামী মে মাসের মধ্যেই কলকাতা মেট্রোয় এই ব্যবস্থাপনা চালু হয়ে যাওয়ার কথা।

    তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে কলকাতা মেট্রোয় সাতটি বিইএসএস বসানো হবে। আপতকালীন সময়ে যার প্রত্যেকটির বিদ্যুৎ উৎপাদন শক্তি ১ মেগাওয়াট করে।

    কিন্তু, এক্ষেত্রে যে প্রধান প্রশ্নটি তোলা হচ্ছে, তা হল - এই ব্যবস্থাপনা ব্যবহারের প্রয়োজনটা কী? কারণ, শেষবার সারা দেশে গ্রিড বিপর্যয়ের যে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেই দিনটি ছিল - ২০১২ সালের ৩০ জুলাই। অর্থাৎ - আজ থেকে প্রায় ১৩ বছ আগে! তার আগে আরও ১১ বছর আগে - ২০০১ সালে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল।

    অর্থাৎ - এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাছাড়া, সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতি হয়েছে, তাতে এমন বড় বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা দিনে দিনে আরও কমবে। আর যদি তেমন কিছু ঘটেও, তাহলেও তার মোকাবিলা করার মতো ব্যবস্থাপনা মজুত রয়েছে।

    যেমন - শেষবার যখন গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল, সেই সময় সিইএসসি কর্তৃপক্ষই আপতকালীন পরিস্থিতিতে মেট্রোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল। তারা তাদের বজবজ কেন্দ্রটিকে গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করে কলকাতা মেট্রোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল।

    এছাড়া, যদি খুব সাধারণ বা ছোটখাট কোনও অঘটন ঘটে, যেমন - সাবস্টেশন বিকল হওয়া - তাহলে খুব দ্রুত তার বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলা যায়। সেক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন কোনও ব্যবস্থাপনা চালুর প্রয়োজন নেই। বরং, তার বদলে পার্শ্ববর্তী সাবস্টেশন থেকেই সরাসরি বিদ্যুতে জোগান চালু করা যায়।

    আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কোনও কারণে যদি মেট্রোর থার্ড রেলে সমস্যা হয়, তাহলে ব্যাটারি ব্যবহার করেও থার্ড রেলে বিদ্যুৎ পাঠানো সম্ভব নয়। উপরন্তু, এই এক-একটি বিইএসএস-এর আয়ু মাত্র ১৪ বছর। কাজেই যদি ওই সময়ের মধ্যে কোনও গ্রিড বিপর্যয় না ঘটে, তাহলে নয়া ব্যবস্থাপনা স্রেফ অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

    এক্ষেত্রে মেট্রো কর্তৃপক্ষের আরও একটি যুক্তি হল - বিইএসএস-এর মাধ্যমে মেট্রোর লাইনে বিদ্যুতের ন্যূনতম সরবরাহ সর্বদা বজায় থাকবে। এবং চাহিদা বাড়লে ব্যাটারি থেকেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এবং তাতে নাকি বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। সেইসঙ্গে, অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রও চালু রাখা যাবে।

    কিন্তু, এই যুক্তি মানতে নারাজ এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের পালটা যুক্তি - ইতিমধ্যেই প্রচুর টাকা খরচ করে মেট্রোর একাধিক স্টেশনে জেনারেটর বসানো হচ্ছে। যা থেকে প্রয়োজনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্র ও ব্যবস্থাপনা চালু রাখা যাবে।

    অন্যদিকে, ব্যাটারি চার্জ করতে যত টাকা খরচ হবে, পরবর্তীতে সেই ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা হলে, তা আর যাই হোক না কেন, সাশ্রয়ী হবে না।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)