শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির তলায় চাপাই পড়েননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়। এমনই দাবি করলেন তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। তৃণমূলের মুখপাত্র ও আইটি সেলের সভাপতির কথায়, 'সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই গাড়ি চাপা পড়ার ছবি একেবারেই ভুয়ো।' তাঁর অভিযোগ, সিপিএম এই ছবি নিয়ে মিথ্যাচার করছে। এই আবহে বাটি ও কাঠের প্লেটের সাহায্য যুক্তি খাঁড়া করেন দেবাংশু। নিজের যুক্তিকে খাঁড়া করতে একটি ছবি এঁকেও বোঝান তিনি। তিনি বলেন, 'যদি সত্যিই গাড়ি চাপা পড়ে ওর চোখে আঘাত লেগেই থাকে, সে কি পাঁচ মিনিট পর ইন্টারভিউ দেওয়ার অবস্থায় থাকতে পারে?' এদিকে দেবাংশু এই যুক্তি দিলেও মিডিয়াতে নিজেই এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। পড়ুয়াকে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে তিনি এই নিয়ে সাফাইও দিয়েছিলেন।
গত ১ মার্চ অভিযোগ ওঠে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি প্রায় পিষে দিয়েছিল ইন্দ্রানুজকে। একদিকে যেখানে যাদবপুরে ব্রাত্যের 'গাড়িতে ছাত্রের চাপা পড়ার' অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করছে তৃণমূল। অপরদিকে ইন্দ্রানুজের গাড়ির সামনে পড়ে থাকার দৃশ্য সম্প্রচারিত হয়েছে খবরের চ্যানেলে। সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জানা গিয়েছে, ইন্দ্রানুজ আপাতত যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি। তাঁর বাঁ চোখ ও মাথায় আঘাত রয়েছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর ‘গাড়ি চাপা’ পড়া পড়ুয়া জানান, ব্রাত্য বসু ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে এলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে পড়ুয়াদের সঙ্গে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবেন। তখন ব্রাত্য বসুকে সবাই বৈঠকে বসার জন্য ঘিরে ধরে, তখন তৃণমূলের ছাত্র নেতারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ও শিক্ষামন্ত্রীকে তাঁর গাড়িতে তুলে দেয়। শিক্ষামন্ত্রী গাড়িতে উঠতেই গতি বাড়ায় চালক। আন্দোলনকারীরা অনেকবার তাঁকে থামতে বললেও নাকি গাড়ির গতিবেগ আরও বাড়ানো হয়। সেই সময় শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি ঘিরে রেখেছিলেন বহু পড়ুয়া। ধাক্কাধাক্কিতেই নাকি গাড়ির সামনে পড়ে যান ইন্দ্রানুজ।
উল্লেখ্য, তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে ব্রাত্য বসু যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ১ মার্চ। সেখানে প্রথম থেকেই গেটে অবরোধ করে রেখেছিলেন পড়ুয়ারা। ছাত্র সংসদের ভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেট দিয়ে ব্রাত্য বসু প্রবেশ করেছিলেন ক্যাম্পাসে। তবে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় ব্রাত্যকে ঘিরে ধরেন আন্দোলনকারীরা। বামপন্থী এবং অতি বাম ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে ইট ছোড়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় পাইলট গাড়ি। শিক্ষামন্ত্রী আহতও হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পালটা দাবি, মন্ত্রীর গাড়িতে চাপা পড়েছেন এক ছাত্র। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। এদিকে ব্রাত্য বসুও এসএসকেএমে গিয়েছিলেন অসুস্থ হয়ে। পরে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে এরপর সেদিন রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠন 'শিক্ষাবন্ধু'র অফিসে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এদিকে জখম পড়ুয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে।