প্রশ্নপত্র আনতে যাওয়ার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে শিক্ষক। তবু দায়িত্ব থেকে সরেননি। কারণ, তাঁর এই প্রশ্ন নিয়ে যাওয়ার উপর বহু পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুরে এমন এক শিক্ষককে পেয়ে ধন্য ধন্য করছেন সকলে। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার গৌরা সোনামুই কুঞ্জবিহারী আদর্শ শিক্ষায়তনেও পরীক্ষার সিট পড়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রঞ্জিতকুমার জানা এ দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আনতে যাচ্ছিলেন। পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। বরাত জোরে প্রাণে বাঁচেন, তবে ভেঙে যায় কলার বোন। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে যান থানায়। প্রশ্ন সংগ্রহ করে, তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেন পরীক্ষাকেন্দ্রে অর্থাৎ নিজের স্কুলে।
এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ নিজের বাইকে করে দাসপুর থানায় প্রশ্ন আনতে যাচ্ছিলেন রঞ্জিতকুমার জানা। ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের বকুলতলা এলাকায় একটি মালবাহী ট্রাকের আনলোডিং চলছিল। হঠাৎই ট্রাকের উপর থেকে একটি দড়ি নীচে ছুড়ে দেন এক শ্রমিক। সেই সময়ই ওই ট্রাকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই শিক্ষক। সেই দড়ি সোজা এসে তাঁর গলায় জড়িয়ে যায়। রাজ্য সড়কের উপর ছিটকে পড়েন তিনি। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটাল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর কলার বোন ভেঙে গিয়েছে।
ডাক্তারদের ওই শিক্ষক বলেন, কিছু একটা করতেই হবে। কারণ, স্কুলে পরীক্ষা। তিনি কোনও ভাবেই সময় নষ্ট করতে পারবে না। এর পরই তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর ব্যান্ডেজ করে দেন। সেই অবস্থাতেই নিজের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তাঁকে দেখে কার্যত অবাক হয়ে যান জেলার শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামাপদ পাত্র। তিনিই সামনে আনেন গোটা ঘটনা। শ্যামাপদ পাত্র বলেন, ‘আমি গিয়ে সবটা দেখে মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসকে ফোন করি। অন্য একজন শিক্ষককে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিই।’
জেলার শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পর মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁকে উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জেলা মনিটরিং কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রামজীবন মাণ্ডি বলেন, ‘এমন শিক্ষকদের কথা শুনলে সত্যি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়।’