গায়ে সাদা থান। কোমরে কম্বল আর বুকে সাদা দড়িতে বাঁধা আছে একটা লোহার চাবি। এই বেশেই সোমবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার রাতেই মারা গিয়েছেন স্বর্ণাভর বাবা মলয় চট্টোপাধ্যায়। পিতৃবিয়োগের শোক আটকে রাখতে পারেনি স্বর্ণাভকে। তাই শোককে দূরে সরিয়ে এবং বাবার ইচ্ছাপূরণ করার লক্ষ্য নিয়ে সোমবার অন্যদের সঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন স্বর্ণাভ।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের বাসিন্দা স্বর্ণাভ। মন্তেশ্বর সাগর বালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এই পড়ুয়ার পরীক্ষার সিট পড়েছে মালডাঙ্গা আর এম ইনস্টিটিউশনে। সেখানেই সোমবার পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন এই পড়ুয়া।
শনিবার রাতেই মৃত্যু হয়েছে মলয় চট্টোপাধ্যায়ের। স্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। পরীক্ষার ঠিক আগে বাবাকে এই ভাবে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন স্বর্ণাভ। বাবার কথা মনে পড়তেই নিজের কর্তব্য ঠিক করে তিনি। কাছা পরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্বর্ণাভ।
এই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা চাইতেন যে ছেলে ভালো করে পড়াশোনা করুক। পরীক্ষায় ভালো ফল করে ভালো কলেজে ভর্তি হোক। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক। বাবার সেই স্বপ্নকেই সত্যি করতে চাইছেন স্বর্ণাভ।
তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে বাবার মৃত্যু হয়েছে। নিয়ম মেনে রবিবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। দুঃখ তো আছেই, কিন্তু বাবার ইচ্ছা কথা মাথায় রেখে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি। চেষ্টা করব বাবার সেই স্বপ্নকে সফল করার। কারণ , বাবা বলতেন,জীবনে চলার পথে যতোই বাধা আসুক, থেমে থাকা চলবে না। আমি সেই কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে চাই।’
যেভাবে স্বর্ণাভ বাবার মৃত্যুর শোকের মধ্যেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন তাতে তাঁর মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে শিক্ষকরা।