• ৪০ কিমি পথ পেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে HS পরীক্ষার্থী, আধঘণ্টা দেরি হওয়ায় পরীক্ষায় বাধা, বিক্ষোভে মিলল অনুমতি
    প্রতিদিন | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: সকাল ছ’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনবার গাড়ি বদলে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রবেশের গেটে হঠাৎ বাধা পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরীক্ষার্থী। প্রথম দিনই জীবনের বড় পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় ভিতরে ঢুকতে নাগাড়ে আর্জি জানাতে অনড় উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থী। ততক্ষণে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ২৮ মিনিট পার। এরপর অভিভাবকদের বিক্ষোভ শুরু হতেই উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের নির্দেশে শেষপর্যন্ত পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র মিলল। কাউন্সিল সভাপতির উদ্যোগে অতিরিক্ত দেড় ঘন্টা সময় দেন ওই পরীক্ষার্থীকে। সোমবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রের ঘটনা।

    রায়গঞ্জের উদয়পুর গার্লস হাই স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুজাতা হেমব্রম। করণদিঘির রসাখোয়ার খুড়কা সীমান্তের জামডাঙায় বাড়ি। বাড়ি থেকে কর্ণজোড়া হাই স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার। এদিন নির্ধারিত সময় সকাল দশটা থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যখন পৌঁছয়,তখন ঘড়িতে সকাল ১০টা বেজে ২৮ মিনিট পার। এই আবহে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ওই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ না দিয়ে বাইরে বের করে দেয়। আকস্মিক মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা পরীক্ষার্থী সুজাতার। কাঁদতে কাঁদতে ওই পরীক্ষার্থী বলেন,”করণদিঘির রসাখোয়া জামডাঙ্গা থেকে আসতে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই কারণে ২৮ মিনিট পর পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয়ই।” বারবার আবেদন করেও পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ না দেওয়ায় বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকরা প্রতিবাদে নামেন। তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

    জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত কর্ণজোড়া স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে তড়িঘড়ি পৌঁছন আসেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক থেকে মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শেষপর্যন্ত সংসদ সভাপতি নির্দেশে বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সুজাতা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। যদিও তাকে অতিরিক্ত দেড় ঘন্টা সময় বরাদ্দ করা হয়। এক অভিভাবিকা সবিতা ছেত্রী জানান,” মেয়েটির বাড়ি রসাখোয়া থেকে অনেক ভিতরে। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে ১০ টা ২৮ মিনিট হয়ে যায়। তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। মেয়েটির কান্নাকাটি দেখে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যাই,কিন্তু আমাদের কথা শুনছিল না। তাই বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হই। শেষপর্যন্ত তাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ হয়।”

    অভিভাবক মুক্তার আলিও দাবি করেন, “সকাল ৬টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছে ওই পরীক্ষার্থী। অথচ এরা কোনও কথাই শুনছিল না। তাই আমরা প্রতিবাদ করেছি।”এদিন পরীক্ষা শেষ করে বাইরে এসে পরীক্ষার্থীর কথায়, “আগে স্কুলের হস্টেলে থাকতাম, কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর রসাখোয়ায় চলে গিয়েছি। মা খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। বাস না মেলায় রসাখোয়া থেকে এখানে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা লেগে গিয়েছে। কিন্তু স্কুল মানতে চাইছিল না। শেষপর্যন্ত পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়ে পরীক্ষা ভালো হয়েছে।”

    ওই পরীক্ষার্থীর স্কুল উদয়পুর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা সরকার বলেন, “পরীক্ষাকেন্দ্রে সময়মতো পৌঁছনোর লক্ষ্যে বাকি সমস্ত পরীক্ষাগুলো স্কুলের হোস্টেল থেকে যাতায়াত করবে ছাত্রীটি। পরীক্ষা পর্যন্ত স্কুল হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জয়েন্ট কনভেনর সুব্রত সাহা বলেন,” দেরি করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোয় স্কুল প্রথমে বুঝতে পারছিল না। স্কুল বিষয়টি নিয়ে পরে প্রশাসন ও কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপর কাউন্সিল তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।” জেলা স্কুল পরিদর্শক মুরারীমোহন মণ্ডল বলেন,”উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিশেষ অনুমতিতে সব সমস্যা মিটে গিয়েছে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)