সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: পরীক্ষাকেন্দ্রের পিছনেই হাতির দল। চরম আতঙ্ক। হুলস্থুল অবস্থা। তারই মধ্যেই বনদপ্তর তাড়াল সেই হাতির দলকে এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও হল নির্বিঘ্নে। সেখানে হাতি তাড়ানোই শুধু নয়, কালচিনি ব্লকের চা বাগান লাগোয়া হাসিমারা হাই স্কুলের পরীক্ষার্থীদের বনদপ্তর এসকর্ট করে বাড়ি ফিরিয়েও দিল। কারণ, ওই স্কুলের পিছনেই এলিফ্যান্ট করিডর। তবে এই ঘটনার সাক্ষী শুধু কালচিনি নয়, একই ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন বনাঞ্চল লাগোয়া পরীক্ষাকেন্দ্রে।
জঙ্গলমহলের জেলাগুলো এবং উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্সে কয়েকহাজার পরীক্ষার্থীকে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিল বনদপ্তর। কোথাও এসকর্ট ভ্যান, কোথাও নিজস্ব গাড়িতে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফিরিয়েও আনা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম থেকে শুরু করে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় বসানো হয় শতাধিক ড্রপগেট। জঙ্গলের রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন রাখা হয় বনকর্মীদেরও। সঙ্গে ছিল হুলাপার্টিও। কয়েকদিন আগে থেকেই এলাকায় মাইকিং করে পরীক্ষার্থীদের এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে যেসব এলাকায় হাতি বর্তমানে রয়েছে সেইসব এলাকার মানুষজনকে বাড়তি সতর্ক করা হয়। তবে উচ্চমাধ্যমিকে অপেক্ষাকৃত অনেক কম পরীক্ষার্থী থাকায় বনদপ্তরকে বেশি সমস্যা পোহাতে হয়নি। এই মুহুর্তে সবথেকে বেশি হাতি রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। প্রায় শতাধিক হাতি রয়েছে জেলার তিনটি বনবিভাগে। পুরুলিয়ায় আছে ৩০ টি। হাতি উপদ্রুত এলাকায় তাই বাড়তি নজরদারি চালানো হয়েছে। বাতিল করে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের ছুটি। কেবলমাত্র খুব জরুরি না হলে কাউকে ছুটি দেওয়া হবে না বলে নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ছয়শো পরিক্ষার্থীকে এদিন এসকর্ট করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। টহলদারিতে ছিল প্রায় ৩০টি গাড়ি। ড্রপগেট ছিল প্রায় ৪০ টি। ঝাড়গ্রামে ২০টি ড্রপ গেট করা হয়। তৈরি ছিল ৫০ জনের র্যাপিড অ্যাকশন টিম।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম জানিয়েছেন, বেলপাহাড়ি, ভুলাভেদা, ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, লোধাশুলি এই পাঁচটি রেঞ্জে পরীক্ষার্থীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৬টি এবং ১২টি টহলদার গাড়ি ছিল। পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে গোটা এলাকায় ৩০টি হাতি রয়েছে। যার মধ্যে আড়শা,বলরামপুর, বাঘমুন্ডি,অযোধ্যা এবং মাঠা রেঞ্জের সীমানায় আছে ১২ থেকে ১৩ টি হাতি। বাঘমুন্ডি রেঞ্জ সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড সীমানায় ২টি, ঝালদা ও কোটশিলা রেঞ্জের ঝাড়খণ্ড সীমানায় ১৩ থেকে ১৪ টি ও কোটশিলা রেঞ্জের জাবর মৌজায় ১টি। ফলে পুরুলিয়া বন বিভাগের আটটি রেঞ্জের তরফেই বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।
বলরামপুর ব্লক প্রশাসনের তরফে ৬ টি ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। অপরদিকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর বনবিভাগের অধীনে জয়পুর বাঁকাদহ, বিষ্ণুপুর, তালডাংরা এবং ওন্দা এই পাঁচ রেঞ্জে বনবিভাগের মোট ১২ টি গাড়ি করে প্রায় ৯০ জন উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও বক্সা টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু এলাকায় বনদপ্তর ছিল সক্রিয়। এবিষয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভের পশ্চিম বিভাগের উপক্ষেত্র অধিকর্তা ডা: হরিকৃষ্ণণ বলেন, “মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক কম। সেই কারণে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির তেমন সমস্যা ছিল না। তবে আমরা পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন জঙ্গল পথে পাহাড়া দিয়ে নিরাপদে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”