নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: তহবিল না থাকায় মাসের পর মাস অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন দিতে পারছে না বাম পরিচালিত তাহেরপুর পুরসভা। গতবছর অক্টোবর মাস থেকেই পেনশনের প্রত্যাশায় চাতক পাখির মতো বসে থাকলেও প্রায় পুরসভার ৪২ জন পেনশনভোগীর অ্যাকাউন্টে এক টাকাও ঢোকেনি। শুধু তাই নয়, ধাপে ধাপে অবসর নেওয়া প্রায় দেড় ডজন কর্মী পাননি গ্র্যাচ্যুইটির টাকাও। সবমিলিয়ে এই অর্থের পরিমাণ ১ কোটি টাকা।
রাজ্যে পালাবদল হলেও তাহেরপুরে নিজেদের দুর্গ আজও ধরে রেখেছে বামেরা। তৃণমূল আজও সেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি। ২০২২ সালের পুর নির্বাচনে তাহেরপুর বামেদের দখলেই আসে। নদীয়া জেলার রানাঘাট ১ ব্লকের অধীনস্থ তাহেরপুর নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির ১৩টি আসনের ৮টিই জিতেছে সিপিএম। বাকি ৫টি গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। সিপিএম পরিচালিত সেই পুরসভার অবস্থা যেন ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’। শিল্প নেই বাম পরিচালিত নোটিফায়েড অঞ্চলটিতে। ‘রেসিডেনশিয়াল ট্যাক্স’ বাদ দিলে নিজস্ব আয়ের কোনও পথ নেই। ফলে নিজস্ব তহবিলের রক্তাল্পতার কারণে পেনশন পাচ্ছেন না পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে তাহেরপুর পৌর পেনশনার্স সমিতির সভাপতি প্রদীপ শর্মা চৌধুরী বলেন, দু’ বছর যাবৎ অনিয়মিত পেনশন পাচ্ছি। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে একেবারেই পেনশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরসভাকে বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি। প্রতিবার তাঁরা দেখছি দেখছি করে কাটাচ্ছেন। পুরাতন পেনশনের ৩৩ জন এবং সব মিলিয়ে ৪২ জন ভুক্তভোগী। এছাড়াও ১৭-১৮ জন কর্মী অবসর নেওয়ার পরেও গ্র্যাচুইটির টাকা পাননি। সেই টাকার পরিমাণ প্রায় এক কোটি। কীভাবে টাকা দেওয়া হবে সেটা পুর বোর্ডকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা সহযোগিতা করছি বলেই তো এতদিন আন্দোলন না করে বসে রয়েছি।
পেনশন না পাওয়ার বিষয়ে সমিতির সম্পাদক গোপাল দাস বলেন, আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সংসার চালাতে পারছি না। মাসের পর মাস পেনশন না পেলে আমাদের সংসার কীভাবে চলবে? প্রতিমাসে চিকিৎসার জন্য মোটা টাকা খরচ হয়। অক্টোবর মাস থেকে অপেক্ষা করে রয়েছি অথচ পুরসভা পেনশন দিচ্ছে না।
প্রাক্তন পুরকর্মীদের পেনশন দিতে না পারার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন তাহেরপুর নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির চেয়ারম্যান উত্তমানন্দ দাস। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা পেনশন দিতে পারছি না। তবে পুরসভার স্বাচ্ছন্দের জায়গায় ফিরলে নিশ্চয়ই সেই টাকা দেওয়া হবে। এটা ওঁদের প্রাপ্য। যেহেতু আমাদের আয়ের উৎস অত্যন্ত কম, তাই এই সমস্যা। সরকারের বিভিন্ন অর্থ কমিশনের টাকা ঢুকলেই আমরা বকেয়া পেনশন মিটিয়ে দেব। কারও প্রাপ্যই বকেয়া থাকবে না। তবে গ্র্যাচুইটি আমরা ইনস্টলমেন্টে দিচ্ছি। কিছুদিন আগেই কয়েকজনকে গ্র্যাচুইটি বাবদ কিছু কিছু করে টাকা মেটানো হয়েছে।