• দুই বর্ধমানে উচ্চ মাধ্যমিকে বসল না হাজার পরীক্ষার্থী
    বর্তমান | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান ও আসানসোল: সোমবার দুই বর্ধমানে প্রায় এক হাজার পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল না। পূর্ব বর্ধমানে ৬৯১জন ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। পশ্চিম বর্ধমানে ২৯৫জন পরীক্ষার্থী এদিন পরীক্ষা দিতে আসেনি। প্রথমদিনেই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া অনুপস্থিত থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে শিক্ষাদপ্তরের। অনুপস্থিতির তালিকায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। পূর্ব বর্ধমানে ৫৮৭জন ছাত্রী পরীক্ষায় বসেনি। তারমধ্যে ২৮১জন রেগুলার ছাত্রী। ৩০৬জন সিসি পরীক্ষার্থী ছিল। ১০৪জন ছাত্র পরীক্ষা দেয়নি। শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে পরীক্ষা দিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, পরীক্ষার চেয়ে একশ্রেণির ছাত্রী সংসারকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তারা আগেই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি রওনা দিয়েছে। অনেকে ট্যাবের টাকা নিয়েও পরীক্ষায় বসেনি। 


    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এমনিতেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম ছিল। বহু ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করার পর পড়াশোনা বন্ধ করেছে। যারা ‘এনরোল’ হয়েছিল তাদেরও অনেকেই পরীক্ষায় বসেনি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অমিত ঘোষ বলেন, এবছর মাধ্যমিকেও বহু ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পড়ুয়ারা নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্ষতি করছে। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়া ঐক্যশ্রীর মতো বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপও চালু রয়েছে। তারপরও যারা পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে তারা ঠিক করছে না। 


    পশ্চিম বর্ধমানে মোট ১৬ হাজার ৬৯৬ জন পরীক্ষার্থী ছিল। তারমধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে ১৬হাজার ৪০১জন। ২৯৫জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২১০জন ছাত্রী। বাকিরা ছাত্র। এদিন পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে কুলটি গার্লস স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কুলটি হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়ের দশজন ছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড আনতে ভুলে যায়। পুলিস দ্রুত তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে অ্যাডমিট কার্ড আনার ব্যবস্থা করে।


    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমদিনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা জেলায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মোবাইল নিয়ে কেউ পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকেনি। কারও পরীক্ষাও বাতিল হয়নি। পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য পুলিস বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে। এছাড়া প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। জেলায় ড্রপআউট বেড়ে যাওয়ায় আধিকারিকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কয়েকদিন আগে জেলাশাসক আয়েশা রানি এ শিক্ষাদপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ড্রপআউট বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে মাধমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগে ছাত্রীদের বিয়ে করার প্রবণতা বন্ধ করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। 


    জেলাশাসক বলেন, নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করার জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকে সচেতনতামূলক প্রচার করা হবে। তারপরও কোনও অভিভাবক ছাত্রীদের বিয়ে দিলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, এবারও ছাত্রীরা ছাত্রদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় পরীক্ষায় বসছে। এটা যেমন গর্বের, তেমনই অনুপস্থিতির হারেও তারা এগিয়ে রয়েছে। সেটাও যথেষ্ট দুর্ভাগ্যজনক। কেন এতজন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকল তার কারণ খোঁজা হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)