• ঝাড়খণ্ড সীমানায় পাচার ও অপরাধ রুখতে দুই রাজ্যের পুলিসের বৈঠক
    বর্তমান | ০৪ মার্চ ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: গোরু, কয়লা, আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও অন্যান্য অপরাধ রুখতে রামপুরহাটে বীরভূম ও ঝাড়খণ্ড পুলিসের আন্তঃরাজ্য সমন্বয় বৈঠক হল। সোমবার রামপুরহাটে পুলিসের গেস্টহাউস ‘কৌশিকী’তে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলার পুলিস সুপার আমনদীপ ও ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার পুলিস সুপার পীতাম্বর সিং খরবার। এছাড়াও দুই রাজ্যের সীমানা এলাকার থানার ওসিরা অংশ নিয়েছিলেন। জেলার পদস্থ পুলিস কর্তারাও হাজির ছিলেন। বীরভূমের পুলিস সুপার বলেন, মূলত সমন্বয়ের উপর জোর দিতেই এদিনের বৈঠক। এছাড়া পরম্পরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান হয়েছে। বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। 


    বীরভূম জেলার অনেকটা অংশজুড়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা রয়েছে। রাজনগর থেকে মহম্মদবাজার, রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই থেকে এক-তিন কিলোমিটারের মধ্যেই ঝাড়খণ্ড। সাধারণভাবে দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি বীরভূম কোনটি ঝাড়খণ্ডের ম঩ধ্যে পড়ছে। ভৌগোলিক এই সুযোগ কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। একসময় বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল। ঝাড়খণ্ড সীমানায় একাধিক নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে খুন করার পাশাপাশি রেললাইনে বিস্ফোরণ, এমনকী মোবাইল টাওয়ার উড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। তৃণমূল সরকার আসার পর ক্রমশ মাওবাদী প্রভাব কমলেও প্রায়ই ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে এরাজ্যে গোরু, কয়লা, বালি, মাদক পাচার সহ নানা ঘটনা সামনে এসেছে। বিহারের মুঙ্গের থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে এরাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ঢোকে। মুঙ্গেরের কারিগররা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করছে ঝাড়খণ্ডে বসে। সীমানা পেরিয়ে তা সহজেই চলে আসে লাগোয়া বীরভূমে। তাতেই আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হয়ে পড়ায় বীরভূমে বারবার শ্যুটআউটের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রায়ই বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। দু‌ই রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কে পুলিস নজরদারি চালালেও বিস্তীর্ণ এলাকা ফাঁকা থাকে। কোথাও জঙ্গল, কোথাও আবার লাগালাগি গ্রাম। কিছুদিন ধরে মুরারইয়ের ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকাগুলিতে চুরি, সশ্রস্ত্র ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। অভিযোগ, ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে অপরাধ ঘটিয়ে ফিরে যাচ্ছে। গত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বেও সীমানা ঘেঁষা মহম্মদবাজার ও নলহাটিতে অশান্তির জন্য শাসকদলের পাশাপাশি রাজ্য পুলিস ঝাড়খণ্ডের দিকে আঙুল তুলেছিল। ভিনরাজ্য থেকে সীমানা পেরিয়ে এসে বাংলার নির্বাচনে অশান্তি পাকায় দুষ্কৃতীরা, গত বিধানসভা ভোটের সময় অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম জেলায় প্রায় ৭০টি নাকা পয়েন্ট রয়েছে। অধিকাংশই ঝাড়খণ্ড সীমানায়। সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে দুই রাজ্যের পুলিসের পক্ষ থেকে কয়লা, বালি, গোরু, আর্মস, ড্রাগ পাচার সহ সীমানা এলাকার নানা অপরাধ সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। অপরাধ রুখতে বীরভূম পুলিসের পক্ষ থেকে আরও বেশি করে সমন্বয় বজায় রাখতে বলা হয়। সীমানায় সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়। যাতে আন্তঃরাজ্য চক্র কোনও অপরাধ ঘটাতে না পারে। বৈঠকে দুই রাজ্যের পুলিসের মধ্যে ফেরার দাগী আসামীদের নামের তালিকা ‘এক্সচেঞ্জ’ হয়েছে। ঘণ্টা তিনেক ধরে এই বৈঠক চলে। পাচার ও অপরাধ রুখতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)